সুমাত্রা থেকে আসা একদল পর্যটকের চোখে হয়তো নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে ইতালির সিসিলিতে অবস্থিত ‘ভিয়া দেই ফ্রাতি’ নামের একটি বিশেষ পথ। এটি কোনো সাধারণ হাঁটাচলার পথ নয়, বরং এক সময়ের সন্ন্যাসীদের ব্যবহৃত একটি তীর্থযাত্রা পথ, যা এখন পর্যটকদের কাছে এক অসাধারণ গন্তব্য।
যারা প্রকৃতির নীরবতা ভালোবাসেন এবং কোলাহলমুক্ত পরিবেশে সময় কাটাতে চান, তাদের জন্য এই পথ হতে পারে আদর্শ।
সিসিলির মাদোনি ন্যাশনাল পার্ক, যা ‘সিসিলীয় আল্পস’ নামেও পরিচিত, এখানকার পাহাড় আর সবুজ প্রকৃতির মাঝে লুকিয়ে আছে এই পথের আসল আকর্ষণ।
দিগন্ত বিস্তৃত পাহাড়শ্রেণী, নানা ধরনের বিরল উদ্ভিদ আর পাখির কলরব – সব মিলিয়ে এক শান্ত পরিবেশ তৈরি হয় এখানে। পর্যটকদের ভাষায়, এখানে নাকি গ্রীষ্মকালে ভ্রমণ করাটা খুব একটা সুখকর নয়, তবে বসন্ত এবং শরৎকালে এর মনোমুগ্ধকর রূপ ভ্রমণকারীদের মন জয় করে নেয়।
এই পথের আসল পরিচয় পাওয়া যায় এর ইতিহাসে।
এক সময় এই পথ ধরে হেঁটে যেতেন ভ্রাম্যমাণ সন্ন্যাসীরা। তাঁদের জীবনযাত্রা, এখানকার স্থানীয় সংস্কৃতি এবং প্রকৃতির সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক – সব কিছুই এই পথের সঙ্গে জড়িয়ে আছে।
কালের বিবর্তনে পথটি হারিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু স্থানীয় এক মনোচিকিৎসক সান্টো মাজ্জারিসি-র অক্লান্ত পরিশ্রমে এটি পুনরুদ্ধার করা হয়।
২০১৭ সালে জনসাধারণের জন্য এটি পুনরায় উন্মুক্ত করা হয়, এবং তারপর থেকেই পর্যটকদের কাছে এটি জনপ্রিয় হতে শুরু করে।
প্রায় ১৬৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পথে হাঁটা শুরু হয় গানগি গ্রাম থেকে।
এরপর পায়ে হেঁটে যেতে হয় পেত্রালিয়া সোত্তানা, গেরাছি সিকুলো, ক্যাসটেলবুওনো এবং শেষে সেফালু পর্যন্ত।
পথে দেখা মেলে প্রাচীনকালের অনেক স্থাপত্য, যেমন – পরিত্যক্ত গির্জা, যা এক সময়ের সন্ন্যাসীদের আশ্রয়স্থল ছিল।
এছাড়াও, স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রা, ঐতিহ্যবাহী খাবার এবং প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর দৃশ্য তো রয়েছেই।
পর্যটকদের জন্য এখানে থাকার এবং খাওয়ারও সুব্যবস্থা রয়েছে।
স্থানীয় ‘এগ্রিটুরিজম’গুলিতে (ফার্ম-স্টে) থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে, যেখানে পর্যটকেরা স্থানীয় খাবার উপভোগ করতে পারেন।
এখানকার ‘মান্না’ বা ‘হোয়াইট গোল্ড’ নামে পরিচিত ছাই গাছের রস থেকে তৈরি আইসক্রিম খুবই জনপ্রিয়।
যারা প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে চান, ইতিহাসের সাক্ষী হতে চান, এবং একই সঙ্গে কিছু দিন শহরের কোলাহল থেকে দূরে থাকতে চান, তাদের জন্য ‘ভিয়া দেই ফ্রাতি’ একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা হতে পারে।
তথ্য সূত্র: The Guardian