খেলাধুলার জগতে, বিশেষ করে রাগবিতে, খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স উন্নত করতে এবং ইনজুরি কমাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। অভিজ্ঞ কোচিংয়ের দিন বুঝি শেষ হতে চলল, কারণ এখন খেলার মাঠের প্রতিটি বিষয় বিশ্লেষণের জন্য ডেটা-নির্ভর বিজ্ঞান এসে গেছে।
খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্য এবং খেলার কৌশল উন্নত করতে এই ডেটা বিশ্লেষণ কিভাবে সাহায্য করছে, তাই নিয়ে আজকের আলোচনা।
ক্যালিফোর্নিয়ার সিলিকন ভ্যালিতে অবস্থিত একটি কোম্পানি, Kitman Labs, ক্রীড়া জগতে এই ডেটা বিশ্লেষণের নেতৃত্ব দিচ্ছে। এর প্রধান নির্বাহী স্টিফেন স্মিথ মনে করেন, খেলার প্রশিক্ষণ এখন কেবল অভিজ্ঞতার উপর নির্ভরশীল নয়।
খেলোয়াড়দের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে এই প্রযুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার কোম্পানির ক্লায়েন্টদের মধ্যে রয়েছে প্রিমিয়ার লীগ, এনএফএল এবং রাগবি ফুটবল ইউনিয়ন-এর মতো বড় বড় ক্রীড়া সংস্থা।
স্মিথ বলছেন, খেলোয়াড়দের ভালো পারফরম্যান্সের জন্য এবং ইনজুরি কমাতে এই ডেটাগুলি খুবই উপযোগী। উদাহরণস্বরূপ, একটি দলের খেলোয়াড়ের শারীরিক অবস্থা কেমন, তা জানার জন্য এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।
আগে, কোচিং ছিল মূলত একজন কোচের নিজস্ব ধারণা ও অভিজ্ঞতার উপর নির্ভরশীল। খেলোয়াড় নির্বাচন থেকে শুরু করে খেলার কৌশল তৈরি করা—সবকিছুতেই তাদের ব্যক্তিগত মূল্যায়নই প্রধান ছিল।
কিন্তু এখন, খেলার প্রতিটি মুহূর্ত ডেটা আকারে সংগ্রহ করা হচ্ছে। খেলোয়াড়দের শরীরে পরিধানযোগ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে, যেমন- বিশেষ সেন্সর বা মাইক্রোচিপযুক্ত বল ব্যবহার করা হয়।
এগুলো মিনিটে ৪০ বার তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। এই ডেটা বিশ্লেষণ করে খেলোয়াড়ের দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করা যায় এবং সেই অনুযায়ী প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা করা সম্ভব হয়।
তবে, অনেকেই মনে করেন, অতিরিক্ত ডেটার ব্যবহার খেলাধুলার মানবিক দিকটিকে দুর্বল করে দিচ্ছে। কোচের নিজস্ব অনুভূতি এবং খেলোয়াড়দের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক কমে যাচ্ছে।
এই বিষয়ে স্টিফেন স্মিথ-এর ধারণা ভিন্ন। তিনি মনে করেন, ডেটাকে কোচের ভাষায় বুঝিয়ে বলতে না পারলে, ডেটা-বিশ্লেষণের কোনো মূল্য নেই।
তিনি আরও যোগ করেন, ভালো কোচেরা ডেটা ব্যবহার করতে জানেন, কিন্তু হয়তো তারা নিজেরাই বুঝতে পারেন না যে তারা আসলে বিজ্ঞান ব্যবহার করছেন।
স্মিথ তার উদাহরণ হিসেবে প্রাক্তন রাগবি খেলোয়াড় মাইকেল চেইকা এবং জো শ্মিটের কথা উল্লেখ করেন। তাদের কোচিং স্টাইল ভিন্ন হলেও, দুজনেই খেলোয়াড়দের সম্পর্কে গভীর ধারণা রাখতেন।
চেইকা খেলোয়াড়দের ভালোভাবে বুঝতে পারতেন, তাদের আবেগ অনুভব করতে পারতেন। অন্যদিকে, জো শ্মিট কৌশলগত দিক দিয়ে ছিলেন খুবই পারদর্শী।
স্মিথ মনে করেন, এই দু’জনের মিলিত গুণাবলী থাকলে একটি দল অপরাজেয় হয়ে উঠতে পারে।
ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) খেলার কৌশল আরও উন্নত করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ভিডিও বিশ্লেষণ দ্রুত করার ক্ষেত্রে AI সাহায্য করতে পারে।
তবে, গুরুতর স্বাস্থ্য বিষয়ক সিদ্ধান্তগুলো এখনো মানুষেরই নেওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন। স্মিথ আরও মনে করেন, খেলোয়াড়দের সুরক্ষা এবং খেলার মান উন্নত করতে প্রযুক্তির ব্যবহার অপরিহার্য।
খেলাধুলার জগতে প্রযুক্তির এই ক্রমবর্ধমান ব্যবহার নিঃসন্দেহে একটি বড় পরিবর্তন। ডেটা বিশ্লেষণ এবং প্রযুক্তির সহায়তায় খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স আরও উন্নত করা সম্ভব হচ্ছে।
একই সাথে, খেলার কৌশল এবং প্রশিক্ষণেও আসছে নতুনত্ব। এটি কেবল রাগবি নয়, বরং সকল ধরনের খেলাধুলার জন্যই প্রযোজ্য।
ভবিষ্যতে খেলাধুলায় প্রযুক্তির ব্যবহার আরও বাড়বে, যা খেলোয়াড় এবং খেলা উভয়কেই উন্নত করবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান