ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য বিষয়ক নীতি প্রায়ই আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে তাঁর কৌশল ছিল বেশ জটিল। প্রথমে কঠিন পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়ে পরে কিছুটা নমনীয় হয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করতেন তিনি।
এই কৌশলের মূল লক্ষ্য ছিল—শুল্কের বিরূপ প্রভাব কমিয়ে আনা এবং সমালোচকদের শান্ত করা। যেমন, এক সময় ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন, তাঁর প্রশাসন “Liberation Day”-তে আমেরিকার সঙ্গে ব্যবসা করা সব দেশের ওপর বড় ধরনের শুল্ক আরোপ করবে।
কিন্তু পরে দেখা যায়, এই ঘোষণার ধরনে পরিবর্তন এসেছে। এখন তিনি বলছেন, কিছু দেশের জন্য শুল্কে ছাড় দেওয়া হতে পারে। বাণিজ্য বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই কৌশল ছিল বাজারকে স্থিতিশীল রাখার একটি চেষ্টা।
আসল ঘটনা হলো, ট্রাম্প বিভিন্ন সময়ে শুল্কের বিষয়ে কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। পরে সেই সিদ্ধান্তগুলো হয় স্থগিত করা হয়েছে, অথবা পরিবর্তন করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, নির্বাচনের পর তিনি মেক্সিকো এবং কানাডা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসা সব পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা বলেছিলেন।
কিন্তু বাস্তবে তেমনটা হয়নি। ফলে, বিনিয়োগকারীরা কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিলেন। আবার, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধের সময়ও ট্রাম্প একই ধরনের কৌশল অবলম্বন করেছিলেন। চীনের পণ্য আমদানির ওপর প্রথমে উচ্চ হারে শুল্ক আরোপের কথা বলা হলেও, পরে তা কমিয়ে আনা হয়।
এই ধরনের নমনীয়তার কারণ হলো, ট্রাম্প সবসময় শুল্ককে একটি দর কষাকষির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছেন। অনেক সময় তিনি এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করেন, যেখানে মনে হয়, সবকিছু বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি এমন কিছু করেন, যা হয়তো ততটা খারাপ নয়।
এই কৌশলের মূল উদ্দেশ্য হলো—শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তকে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য অংশীদারদের ‘অন্যায় আচরণের’ জবাব হিসেবে উপস্থাপন করা। বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের পদক্ষেপের মাধ্যমে শুল্ককে সহজভাবে ব্যাখ্যা করা যায় এবং জনসমর্থন আদায় করা সম্ভব হয়।
ট্রাম্প প্রায়ই বলতেন, যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বের অন্যান্য দেশ বাণিজ্যিকভাবে ঠকাচ্ছে। এই ধারণাটিকে সামনে রেখে তিনি শুল্ক আরোপকে ন্যায্য প্রমাণ করার চেষ্টা করতেন।
তবে, ট্রাম্পের এই কৌশল সত্ত্বেও শুল্কের কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এবং ভোক্তাদের মধ্যে একটা অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে। সম্প্রতি কনফারেন্স বোর্ড জানিয়েছে, ভোক্তাদের মধ্যে আস্থা কমে গেছে, যার মূল কারণ হলো শুল্কের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ।
ট্রাম্প শুল্কের বিষয়ে তাঁর আগের অবস্থানে অনড় থাকতে পারেন। বাণিজ্য বিশ্লেষকদের মতে, শুল্ক আরোপের ব্যাপারে ট্রাম্পের আগ্রহ গভীর এবং এটিকে তিনি একটি দর কষাকষির কৌশল হিসেবেই দেখেন। যদিও তাঁর এই কৌশল সবসময় অর্থনীতির জন্য ভালো ফল বয়ে আনে না।
তথ্য সূত্র: সিএনএন