সৌদি আরবে ২০৩৪ ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। এরি মধ্যে দেশটির একটি স্টেডিয়াম নির্মাণ সাইটে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।
আল-খोबर-এ অবস্থিত আরামকো স্টেডিয়ামে এই ঘটনাটি ঘটেছে। নির্মাণ কাজটি তদারকি করছে বেলজিয়ামের কোম্পানি বেসিক্স গ্রুপ।
সংস্থাটি নিশ্চিত করেছে যে, গত ১২ই মার্চ স্টেডিয়ামের নির্মাণস্থলে একজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। তারা এক বিবৃতিতে জানায়, ‘আমরা আমাদের যৌথ অংশীদার আল-বাওয়ানির সঙ্গে মিলে বেশ কয়েক মাস ধরে এই সাইটে কাজ করছি। আমরা বিস্তারিত এবং পরীক্ষিত নিরাপত্তা পদ্ধতি অনুসরণ করি, যা সবসময় কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।’
দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে কর্তৃপক্ষ তদন্ত করছে এবং কোম্পানিটি তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করছে বলেও জানানো হয়।
আরামকো স্টেডিয়ামটি ২০২৬ সালে সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। ৪৭,০০০ দর্শক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন এই স্টেডিয়ামটি বিশ্বকাপ আয়োজনের ১৫টি ভেন্যুর মধ্যে অন্যতম। এছাড়া, এটি ২০২৩ সালের এশিয়ান কাপের কিছু ম্যাচেরও আয়োজন করবে।
ডিসেম্বরে সৌদি আরবকে ২০৩৪ বিশ্বকাপের আয়োজক হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এর মাধ্যমে দেশটি খেলাধুলায় আরও বেশি বিনিয়োগ করতে এবং অর্থনীতির বহুমুখীকরণ করতে চাইছে।
এই লক্ষ্যে তারা অবকাঠামো খাতে বিশাল বিনিয়োগ করছে, যার মধ্যে রয়েছে ১৫টি স্টেডিয়াম নির্মাণ অথবা সংস্কার এবং ১,৮৫,০০০ নতুন হোটেল কক্ষ তৈরি করা।
তবে, মানবাধিকার সংস্থাগুলো সৌদি আরবে শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে, ‘কাফালা’ নামক স্পন্সরশিপ পদ্ধতির কারণে শ্রমিকদের অধিকার লঙ্ঘিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এই পদ্ধতিতে শ্রমিকরা একটি নির্দিষ্ট নিয়োগকর্তার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ থাকতে বাধ্য হন। মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) জানায়, শ্রমিকরা প্রায়ই বিভিন্ন ধরনের শোষণের শিকার হন, যেমন – চুক্তি পরিবর্তন, অতিরিক্ত নিয়োগ ফি, বেতন পরিশোধ না করা, পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া এবং জোরপূর্বক শ্রম দেওয়া ইত্যাদি।
যদিও সৌদি আরব সরকার শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষায় কিছু সংস্কারের ঘোষণা করেছে, তবুও নিয়োগকর্তারা শ্রমিকদের ওপর এখনো অনেক বেশি ক্ষমতা ধরে রেখেছে বলে এইচআরডব্লিউ জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, সৌদি আরবে বিভিন্ন দেশের বিপুল সংখ্যক শ্রমিক কাজ করেন, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশিও রয়েছেন।
২০৩৪ বিশ্বকাপের বিড প্রধান হাম্মাদ আলবালাউই জানান, গত কয়েক বছরে মানবাধিকারের ক্ষেত্রে সৌদি আরব অনেক দূর এগিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। আমরা এমন কিছু তৈরি করতে চাই যা আমাদের জন্য সঠিক। আমাদের এই যাত্রা শুরু হয়েছে ২০১৬ সাল থেকে, বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রস্তাব পাওয়ার কারণে নয়।’
তথ্যসূত্র: সিএনএন