মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুকের শব্দ কমানোর যন্ত্র (সাইলেন্সার) বিষয়ক ফেডারেল বিধিনিষেধের বিষয়ে তাদের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করার কথা ভাবছে দেশটির বিচার বিভাগ। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই বিতর্কিত সিদ্ধান্তটি এখন নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
খবর অনুযায়ী, দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশের পর এই বিষয়ে নতুন করে পর্যালোচনা শুরু হয়েছে, যেখানে বন্দুকের অধিকার সীমিত করতে পারে এমন নীতিগুলো পুনরায় বিবেচনা করার কথা বলা হয়েছে।
জানা গেছে, ১৯৩০-এর দশক থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুকের শব্দ কমানোর যন্ত্র বা সাইলেন্সার-এর উপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এই যন্ত্রগুলি মূলত বন্দুকের নলের সাথে যুক্ত হয়ে গুলির শব্দকে হ্রাস করে।
বর্তমানে, ৪২টি রাজ্যে এটি বৈধ হলেও ফেডারেল আইনে এর ব্যবহার বেশ কঠিন। ন্যাশনাল ফায়ার আর্মস অ্যাক্ট (NFA) অনুযায়ী, যারা এই ধরনের যন্ত্র কিনতে চান, তাদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ছবি জমা দিতে হয়, ব্যাকগ্রাউন্ড চেক সম্পন্ন করতে হয় এবং ২০০ ডলার কর দিতে হয়।
বিচার বিভাগ দীর্ঘদিন ধরে এই আইনের পক্ষে যুক্তি দিয়ে আসছিল। তাদের বক্তব্য ছিল, সাইলেন্সার নিষিদ্ধ করা হয়নি, বরং কীভাবে এটি ব্যবহার করা যাবে, সেই বিষয়ে কিছু নিয়ম তৈরি করা হয়েছে।
তবে, সম্প্রতি বিচার বিভাগ একটি মামলার শুনানিতে ৩০ দিনের বিরতি চেয়েছিল, যেখানে একজন অস্ত্র ব্যবসায়ীর কাছে নিবন্ধিত নয় এমন সাইলেন্সার পাওয়া গিয়েছিল। এর কারণ হিসেবে তারা জানায়, সাইলেন্সার-সংক্রান্ত তাদের আইনি অবস্থান তারা পুনর্বিবেচনা করছে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্দেশে বিচার বিভাগ এই পর্যালোচনা শুরু করেছে। ট্রাম্প প্রশাসন বন্দুক নীতিগুলি পুনর্বিবেচনা করার নির্দেশ দেয় এবং অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডির ওপর সেই দায়িত্ব অর্পণ করে।
বিচার বিভাগের চিফ অফ স্টাফ ও ভারপ্রাপ্ত সহযোগী অ্যাটর্নি জেনারেল চ্যাড মিজেলের মতে, আইন মান্যকারী নাগরিকদের দ্বিতীয় সংশোধনী অধিকার রক্ষা করা তাদের প্রধান অগ্রাধিকার।
এই বিষয়টি নিয়ে বন্দুক অধিকার বিষয়ক কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে আপত্তি জানিয়ে আসছেন। তাদের মতে, সাইলেন্সার-এর অপব্যবহার তেমন একটা হয় না এবং এটি দ্বিতীয় সংশোধনী দ্বারা সুরক্ষিত।
যদিও, বিচার বিভাগের এই সিদ্ধান্ত সম্ভবত বন্দুক অধিকার সংগঠনগুলোর জন্য সুপ্রিম কোর্টে আইনের বিরুদ্ধে লড়াই করা কঠিন করে তুলবে।
অন্যদিকে, বন্দুক নিরাপত্তা বিষয়ক সংগঠনগুলো মনে করে, সাইলেন্সার জনসাধারণের জন্য ঝুঁকি বাড়ায়। তাদের মতে, বন্দুকের শব্দ একটি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য, যা মানুষকে বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করে।
এছাড়াও, সাইলেন্সার ব্যবহারের ফলে বন্দুকের ঝাঁকুনি কমে যায়, যা হামলাকারীদের জন্য নির্বিঘ্নে গুলি চালানো সহজ করে তোলে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সিনেমায় সাইলেন্সারের মাধ্যমে গুলির শব্দ কমানোর বিষয়টি যেভাবে দেখানো হয়, বাস্তবে তেমনটা ঘটে না। বাস্তবে এর তেমন কোনো কৌশলগত সুবিধা নেই, বিশেষ করে ব্যাপক গুলি চালানোর মতো ঘটনায়।
কেউ যদি খুব কাছে থেকে সাইলেন্সারযুক্ত বন্দুক দিয়ে গুলি করে, তবেও অন্যরা গুলির শব্দ শুনতে পাবে।
বর্তমানে, বিচার বিভাগের এই পদক্ষেপের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন