মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের একটি গোপন চ্যাট গ্রুপের বার্তা ফাঁস হওয়ার ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। প্রভাবশালী মার্কিন ম্যাগাজিন ‘দ্য আটলান্টিক’ সম্প্রতি সেই চ্যাট গ্রুপের কিছু বার্তা প্রকাশ করেছে, যেখানে ইয়েমেনে চালানো একটি মার্কিন বিমান হামলার বিস্তারিত তথ্য ছিল।
প্রকাশিত বার্তাগুলোতে দেখা যায়, হামলার আগে হোয়াইট হাউজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা সংবেদনশীল সামরিক তথ্য আদান-প্রদান করেছেন। এই তথ্য ফাঁস হওয়ার ফলে নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে, হামলার সময় এবং ব্যবহৃত বিমান ও ড্রোন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশিত হওয়ায় অপারেশনাল নিরাপত্তা লঙ্ঘিত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ফাঁস হওয়া বার্তাগুলোতে তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী (Defense Secretary) পিটার হেগসেথ (Pete Hegseth) সহ অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে কথোপকথন ছিল। একটি বার্তায় হেগসেথ লেখেন, “আবহাওয়া অনুকূলে। সেন্ট্রাল কমান্ডের (CENTCOM) সঙ্গে কথা হয়েছে, আমরা মিশন (mission) শুরু করতে প্রস্তুত।” হামলার বিস্তারিত পরিকল্পনা সম্পর্কেও সেখানে আলোচনা হয়।
আটলান্টিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামলার প্রায় দুই ঘণ্টা আগে এই বার্তাগুলো আদান-প্রদান করা হয়েছিল। যদি এই সময়ের মধ্যে কোনো ভুল হাতে তথ্য চলে যেত, তবে তা মার্কিন পাইলট এবং অন্যান্য কর্মীদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারত।
এছাড়াও, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (National Security Advisor) মাইক ওয়াল্টজ (Mike Waltz) একটি বার্তায় জানান, হামলার লক্ষ্যবস্তুটি ছিল একটি ভবন, যা ধ্বংস করা হয়েছে এবং অভিযান সফল হয়েছে। তিনি লেখেন, “প্রথম লক্ষ্যবস্তু ছিল তাদের শীর্ষস্থানীয় ক্ষেপণাস্ত্র বিশেষজ্ঞ। আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে তিনি তার প্রেমিকার বাড়িতে প্রবেশ করেছেন এবং সেই ভবনটি এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।”
তবে, এই ঘটনার পর হোয়াইট হাউস (White House)-এর পক্ষ থেকে ‘দ্য আটলান্টিক’-এর প্রতিবেদনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি (Press Secretary) কারোলিন লেভিট (Karoline Leavitt) এক বিবৃতিতে বলেছেন, এই প্রতিবেদনটি ভিত্তিহীন এবং ট্রাম্প-বিরোধীদের দ্বারা তৈরি করা হয়েছে।
এছাড়াও, মধ্যপ্রাচ্যের জন্য প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ (Steve Witkoff) কিভাবে মস্কোতে বসে এই বার্তাগুলো পেয়েছিলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। লেভিট জানান, উইটকফকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একটি সুরক্ষিত যোগাযোগের ব্যবস্থা দেওয়া হয়েছিল এবং মস্কোতে থাকাকালীন তার কাছে সেটিই একমাত্র ফোন ছিল।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘটনা নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করেছে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের গোপনীয়তা রক্ষার ক্ষেত্রে নতুন করে ভাবতে হবে। বিশেষ করে, গুরুত্বপূর্ণ সামরিক তথ্য আদান-প্রদানে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
তথ্য সূত্র: সিএনএন