যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী (চ্যান্সেলর) র্যাচেল রিভস সম্প্রতি এক ঘোষণায় দেশের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ রূপরেখা তুলে ধরেছেন। এই ‘স্প্রিং স্টেটমেন্ট’-এ (mid-year financial update) একদিকে যেমন কল্যাণ খাতে ব্যয় সংকোচনের কথা বলা হয়েছে, তেমনি দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ খাতে বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
ব্রিটেনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমানো হয়েছে, কিন্তু সরকারের লক্ষ্য হলো আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বাজেট ঘাটতি কমিয়ে উদ্বৃত্ত তৈরি করা।
রিভসের এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, সরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রে কিছু কাটছাঁট করা হবে। তবে, প্রতিরক্ষা এবং অবকাঠামো খাতে অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ বাড়ানো হবে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে সরকার একদিকে যেমন সরকারি ঋণের বোঝা কমাতে চাইছে, তেমনি কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থ বিনিয়োগ করতে চাইছে।
তবে, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। অফিসের ফর বাজেট রেসপন্সিবিলিটি (Office for Budget Responsibility – OBR), যারা অর্থনৈতিক পূর্বাভাস তৈরি করে, তারা সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত কিছু সঞ্চয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এর ফলে সরকারের ব্যয় সংকোচনের পরিকল্পনা নতুন করে সাজাতে হতে পারে। বিশেষ করে, ইউনিভার্সাল ক্রেডিট-এর (Universal Credit) মতো সামাজিক সুরক্ষা খাতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে, ইউনিভার্সাল ক্রেডিট-এর স্ট্যান্ডার্ড অ্যালাউয়েন্স ২০২৯-৩০ সালের মধ্যে প্রতি সপ্তাহে ৯২ পাউন্ড থেকে ১০৬ পাউন্ড করা হবে। তবে, ইউনিভার্সাল ক্রেডিটের সঙ্গে সম্পর্কিত স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ ৫০ শতাংশ কমানো হবে এবং এরপর তা অপরিবর্তিত রাখা হবে। সরকার মনে করছে, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রায় ৩.৪ বিলিয়ন পাউন্ড সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।
বর্তমানে ব্রিটেনের অর্থনীতি উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের সুদহার বৃদ্ধির কারণে কিছুটা চাপের মধ্যে রয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরের বাজেট ঘোষণার সময় ২০২৫ সালের জন্য ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিকতম পূর্বাভাসে তা ১ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।
অন্যদিকে, লেবার পার্টির পরিকল্পনা সংস্কারের কারণে দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতির উন্নতি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ওবিআর-এর পূর্বাভাস অনুযায়ী, এই সংস্কারের ফলে দশকের শেষে অর্থনীতির আকার ০.২ শতাংশ এবং ১০ বছরের মধ্যে ০.৪ শতাংশ বাড়তে পারে। এর ফলে অর্থনীতিতে প্রায় ১৫.১ বিলিয়ন পাউন্ড যোগ হবে।
এই ঘোষণার মাধ্যমে সরকার একদিকে যেমন আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে চাইছে, তেমনি ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ খাতে বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। তবে, এর বাস্তবায়ন নির্ভর করবে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার ওপর।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান