মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন কর্মকর্তাদের মধ্যে হওয়া গোপন বার্তা বিনিময়ের কিছু অংশ সম্প্রতি প্রকাশ করেছে ‘দ্য আটলান্টিক’ ম্যাগাজিন। এই বার্তাগুলোতে ইয়েমেনে সামরিক অভিযান পরিচালনার বিস্তারিত পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
বিষয়টি সামনে আসার পরে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে, কারণ এই চ্যাট গ্রুপে থাকা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা তাঁদের বক্তব্যে তথ্যের গোপনীয়তা নিয়ে ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন।
প্রকাশিত হওয়া বার্তাগুলোর বিষয়বস্তু ছিল বোমা হামলা, ড্রোন থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ এবং আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো। ম্যাগাজিনটি জানাচ্ছে, তথ্যের সুরক্ষার কথা ভেবে তারা আক্রমণের সুনির্দিষ্ট বিবরণ প্রকাশ করেনি।
তবে, এই ঘটনার পর ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, চ্যাট গ্রুপে বিনিময় হওয়া কোনো তথ্যই ‘শ্রেণীবদ্ধ’ বা ‘গোপনীয়’ ছিল না। যদিও ‘দ্য আটলান্টিক’ ম্যাগাজিন এটিকে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে চালানো মার্কিন হামলার ‘অপারেশনাল ডিটেইলস’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি এই বার্তাগুলো কোনো বিদেশি শক্তির হাতে পড়ত, অথবা যারা আমেরিকার স্বার্থের বিরোধী, তাদের কাছে পৌঁছাত, তাহলে হুতি বিদ্রোহীরা তাদের বিরুদ্ধে আসন্ন হামলার প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ পেত। এর ফলে, মার্কিন পাইলটদের জন্য পরিস্থিতি মারাত্মক হতে পারত।
অন্যদিকে, হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট ম্যাগাজিনটিকে পাঠানো এক ইমেইলে জানান, গ্রুপ চ্যাটে কোনো গোপনীয় তথ্য আদান-প্রদান হয়নি। তবে, তিনি যোগ করেন, সিআইএ পরিচালক এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা উভয়েই এই বিষয়ে তাঁদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এই বিষয়ে মুখ খুলেছেন। তিনি বলেছেন, ফাঁস হওয়া তথ্য ‘শ্রেণীবদ্ধ’ ছিল না এবং এটিকে তিনি ‘গত দুই মাসের মধ্যে হওয়া একমাত্র ভুল’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে হাউস ইন্টেলিজেন্স কমিটির শুনানির প্রাক্কালে এই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। শুনানিতে ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের পরিচালক এবং সিআইএ পরিচালক, যারা এই সিগন্যাল চ্যাটে অংশ নিয়েছিলেন, তাঁরাও জানান যে, ফাঁস হওয়া তথ্যের মধ্যে কোনো গোপনীয় বিষয় ছিল না।
তবে, ডেমোক্র্যাটরা এই শুনানিতে আক্রমণের বিস্তারিত পরিকল্পনাকে কেন গোপনীয় তথ্য হিসেবে ধরা হচ্ছে না, সেই বিষয়ে ব্যাখ্যা দাবি করতে পারেন।
এদিকে, পেন্টাগন তাদের কর্মীদের সিগন্যাল ব্যবহারের বিরুদ্ধে সতর্ক করেছে। গত ১৮ই মার্চ তারিখে পাঠানো এক সতর্কবার্তায় বলা হয়, রুশ হ্যাকিং গ্রুপগুলো এর দুর্বলতা কাজে লাগাতে পারে।
পেন্টাগন কর্মীদের সতর্ক করে জানায়, তথ্যের সুরক্ষার স্বার্থে এই ধরনের অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করা উচিত নয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আজকের যুগে যখন তথ্য আদান-প্রদান বাড়ছে, তখন এ ধরনের দুর্বলতাগুলো উদ্বেগের কারণ।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান