যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অফ হেলথ (এনআইএইচ) নামক গবেষণা সংস্থা তাদের নীতির পরিবর্তনের কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা প্রকল্পের তহবিল বন্ধ করে দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে একজন খ্যাতনামা চক্ষু বিশেষজ্ঞ, ড. নিশা আচার্যের প্রায় দুই মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের গবেষণা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।
ড. আচার্য, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন চিকিৎসক এবং বিজ্ঞানী, চোখের প্রদাহজনিত রোগ নিয়ে গবেষণা করেন। সম্প্রতি তিনি একটি গবেষণা করছিলেন যা ‘শিংগ্রিক্স’ নামক একটি ভ্যাকসিনের নিরাপত্তা এবং কার্যকারিতা নিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। এই ভ্যাকসিনটি বয়স্কদের মধ্যে দেখা যাওয়া হার্পিস জোস্টার বা সাধারণ ভাষায় চোখের আশেপাশে হওয়া চামড়ার রোগ প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়।
আশ্চর্যজনকভাবে, এনআইএইচ-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভ্যাকসিন বিষয়ক দ্বিধা (vaccine hesitancy) নিয়ে গবেষণা করার ওপর তাদের বর্তমান নীতিতে জোর দেওয়া হচ্ছে না। মূলত, এই কারণেই ড. আচার্যের গবেষণা প্রকল্পের অনুমোদন বাতিল করা হয়েছে। যদিও ড. আচার্যের গবেষণা ভ্যাকসিন বিষয়ক দ্বিধা নিয়ে ছিল না, বরং ভ্যাকসিনটির নিরাপত্তা এবং কার্যকারিতা নিয়ে ছিল, তবু তিনি এই সিদ্ধান্তের শিকার হয়েছেন।
এই ঘটনার পর, ড. আচার্য তাঁর গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছেন না। এর ফলে, তাঁর অধীনে কাজ করা তিনজন কর্মীকে চাকরিচ্যুত করতে হয়েছে। তিনি এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করার পরিকল্পনা করছেন।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে, যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানব সেবা বিভাগের (এইচএইচএস) নতুন নীতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কারণ, বর্তমানে এই বিভাগের নেতৃত্বে রয়েছেন রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়র, যিনি ভ্যাকসিন নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেন। যদিও তিনি নিজেকে ‘নিরাপত্তাপন্থী’ এবং ‘ভালো বিজ্ঞানের পক্ষে’ বলে দাবি করেছেন, তবে তাঁর এই অবস্থান গবেষকদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
ড. আচার্যের মতে, তাঁর গবেষণা প্রকল্পটি বাতিল করার কারণ সম্ভবত ছিল একটি সাধারণ শব্দ অনুসন্ধান (keyword search)। তাঁর গবেষণায় ‘ভ্যাকসিন’ এবং ‘দ্বিধা’ শব্দ দুটি ব্যবহারের কারণে এমনটা হয়েছে। তিনি মনে করেন, এটি গবেষণার বিষয়বস্তু ভালোভাবে মূল্যায়ন না করে, ভুলভাবে নেওয়া একটি সিদ্ধান্ত।
এই ঘটনার ফলস্বরূপ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গবেষণা খাতে অর্থায়ন হ্রাস হওয়ার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। এর ফলে শুধু ড. আচার্যই নন, অন্যান্য বিজ্ঞানী এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন।
এই ধরনের ঘটনা বিশ্বজুড়ে গবেষণা এবং জনস্বাস্থ্য খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে, ভ্যাকসিন-সম্পর্কিত গবেষণায় অর্থায়ন হ্রাস পেলে, এর নিরাপত্তা এবং কার্যকারিতা সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান সীমিত হয়ে আসবে। তাই, এই ধরনের গবেষণাগুলোর গুরুত্ব বিবেচনা করে, উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন