যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিদেশি শিক্ষার্থীকে আটকের ঘটনা ঘটেছে, যা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় ও রাজ্য পর্যায়ের নেতারা। বৃহস্পতিবার (গতকাল) দেশটির ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) বিভাগের সদস্যরা ওই শিক্ষার্থীকে আটক করে।
শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। খবরটি জানিয়েছে সিএনএন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আটকৃত শিক্ষার্থী মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের (Twin Cities) স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ছাত্র ছিলেন। তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের একটি আবাসস্থল থেকে আটক করা হয়।
তবে ওই শিক্ষার্থীর পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা ঘটনার বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতি কঠোর হওয়ার প্রেক্ষাপটে দেশটির বিভিন্ন স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন বিদেশি নাগরিককে এর আগে সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর আটকের ঘটনা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (DHS) এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তারা বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করার জন্য আইসিই-এর দিকে ইঙ্গিত করেছে।
তবে সিএনএন-এর পক্ষ থেকে আইসিইর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
আটককৃত শিক্ষার্থীর আইনজীবীও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি জানান, এটি অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি বিষয় এবং তারা তাদের মক্কেলের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করতে চান।
ডেমোক্রেটিক দলের সিনেটর অ্যামি ক্লবুচার এক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, তিনি এবং তার দপ্তর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং এই উদ্বেজনক ঘটনার তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, শিক্ষার্থীর আটকের বিষয়ে তারা আগে থেকে অবগত ছিল না এবং ফেডারেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কোনো তথ্য আদান-প্রদান করা হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট রেবেকা কানিংহাম, ছাত্র বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন ফিলিপস এবং ইক্যুইটি ও ডাইভার্সিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্সিডিজ রামিরেজ ফার্নান্দেজ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বিভাগ, যার মধ্যে ইউনিভার্সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্টও (UMPD) অন্তর্ভুক্ত, তারা ফেডারেল অভিবাসন আইন প্রয়োগ করে না এবং কোনো ব্যক্তির অভিবাসন বিষয়ক তথ্য জানতে চায় না।”
মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের গভর্নর ডেমোক্রেট দলের টিম ওয়ালজ এক টুইটে বলেন, “আমি হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সঙ্গে কথা বলেছি এবং আরও তথ্য পেলে তা শেয়ার করব। মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণার একটি আন্তর্জাতিক কেন্দ্র। এখানে ভিসা নিয়ে অনেক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে, তাই আমাদের দ্রুত ঘটনার বিস্তারিত জানা প্রয়োজন।”
মিনিয়াপলিসের মেয়র জ্যাকব ফ্রে এক টুইটে বলেছেন, “মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর সাম্প্রতিক আটকের ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সকল শিক্ষার্থীর জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে, যেখানে তারা কোনো ভয় ছাড়াই পড়াশোনা করতে পারবে। আমি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি এবং পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছি।”
ডেমোক্রেটিক দলের রাজ্য সিনেটর ডরন ক্লার্ক সিএনএন-এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান কেএআরই-কে বলেন, “সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। আমরা জানি না ওই শিক্ষার্থী কোথায় আছেন, তার নামও আমরা জানি না, আসলে কী ঘটেছে কিছুই জানি না… ফেডারেল সরকার থেকেও আমরা কোনো খবর পাইনি… আমার মনে হয়, ঘটনার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের নীরবতা খুবই হতাশাজনক এবং ভীতিকর।”
ডেমোক্রেটিক দলের আরেক রাজ্য সিনেটর ওমর ফাতেহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলেছেন, “আমাদের সম্প্রদায়ের সকলকে রক্ষা করতে কী করা যায়, সে বিষয়ে সকল স্তরের নেতাদের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।”
তথ্য সূত্র: সিএনএন