মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ জেনারেল পদে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মনোনীত লেফটেন্যান্ট জেনারেল ড্যান “রেজিন” কেইন মঙ্গলবার সিনেটের শুনানিতে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, তিনি কখনো “মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন” (MAGA) টুপি পরেননি।
এই বিষয়টি নিয়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে তার মতের অমিল দেখা যাচ্ছে।
**রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার**
সেনেট আর্মড সার্ভিসেস কমিটির শুনানিতে কেইনকে সরাসরি প্রশ্ন করা হয়, তিনি কখনো ট্রাম্পের সামনে MAGA টুপি পরেছিলেন কিনা। জবাবে কেইন দ্ব্যর্থহীনভাবে “না” বলেন।
এমনকি তিনি এও জানান, তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সমর্থনে কোনো পোশাকও পরিধান করেননি।
ট্রাম্প এর আগে দাবি করেছিলেন, কেইন নাকি তাকে ভালোবাসেন এবং তার জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত। তবে কেইন এই প্রসঙ্গে বলেন, তিনি টেপ শুনেছেন এবং তার মনে হয়েছে, ট্রাম্প সম্ভবত অন্য কারো কথা বলছিলেন।
সিনেটের এই শুনানিতে কেইনের মনোনয়ন নিয়ে যখন আলোচনা চলছিল, তখন অনেকেই তার রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। কারণ, তিনি সশস্ত্র বাহিনীর একজন গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হতে যাচ্ছেন।
**সামরিক জীবন ও বর্তমান প্রেক্ষাপট**
জেনারেল কেইন দীর্ঘদিন ধরে সামরিক বাহিনীতে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি একজন অভিজ্ঞ এফ-১৬ পাইলট এবং ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
কেইন এর আগে বিশেষ করে গোয়েন্দা ও বিশেষ অভিযান বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।
যদি কেইনকে এই পদে বহাল করা হয়, তাহলে তিনি এমন একটি সময়ে পেন্টাগনে প্রবেশ করবেন, যখন রাজনৈতিক পরিস্থিতি বেশ উত্তপ্ত।
বর্তমানে হাজার হাজার সেনা সদস্যকে অভিবাসন বিরোধী পদক্ষেপের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বৈচিত্র্য, সাম্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বিষয়গুলি বাদ দেওয়ার বিষয় নিয়েও বিতর্ক চলছে।
এই প্রেক্ষাপটে কেইনের মনোনয়ন এবং তার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
সিনেটের শুনানিতে কেইনকে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম কয়েক মাসের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক বেশ কিছু ঘটনা নিয়েও প্রশ্ন করা হয়। এর মধ্যে অন্যতম ছিল, ইরানের সমর্থনপুষ্ট হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান নিয়ে শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মধ্যে হওয়া একটি ‘সিগন্যাল’ চ্যাট।
কেইন এই চ্যাট বিষয়ক প্রশ্নগুলো এড়িয়ে যান, তবে সামরিক অভিযানে ‘গোপনীয়তা রক্ষা’র ওপর জোর দেন।
শুনানিতে কেইন বলেন, “সামরিক কার্যক্রম পরিচালনায় আমরা সবসময়ই অপ্রত্যাশিত বিষয়গুলো গোপন রাখতে চাই।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমি সবসময় সঠিক যোগাযোগের জন্য সঠিক মাধ্যম ব্যবহার করেছি।”
জেনারেল কেইনের প্রতি উভয় দলের সিনেটরদের সমর্থন ছিল লক্ষণীয়। তারা কেইনের দীর্ঘ কর্মজীবনের প্রশংসা করেন এবং একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
কেইন নিজেও স্বীকার করেন যে, তিনি একজন “অপ্রথাগত” ব্যক্তি, তবে বর্তমান পরিস্থিতিকে “অপ্রথাগত সময়” হিসেবে বর্ণনা করেন।
তিনি বলেন, “এখন বেইজিংয়ে রাত ৯টা ৪৮ মিনিট, তেহরানে সন্ধ্যা ৬টা ৪৮ মিনিট, মস্কোতে বিকেল ৪টা ৪৮ মিনিট এবং পিয়ংইয়ংয়ে রাত ১০টা ৪৮ মিনিট। এই মুহূর্তে আমাদের জাতি অভূতপূর্ব বৈশ্বিক ঝুঁকির সম্মুখীন।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমাদের প্রতিপক্ষরা এগিয়ে যাচ্ছে, বিশ্বজুড়ে পারমাণবিক হুমকি বাড়ছে এবং প্রতিরোধের বিকল্প নেই। আমাদের জাতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে।”
তথ্য সূত্র: সিএনএন