পুরুষদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান একাকিত্ব এবং সমাজের উপর এর প্রভাব নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনা চলছে। সম্প্রতি, নেটফ্লিক্সে মুক্তি পাওয়া ‘অ্যাডোলসেন্স’ নামক একটি ব্রিটিশ টিভি সিরিজে ১৩ বছর বয়সী কিশোর জেমি মিলারের গল্প তুলে ধরা হয়েছে। যেখানে অনলাইনে ঘৃণা ও সহিংসতার শিকার হয়ে এক কিশোর কিভাবে নারীবিদ্বেষী ও চরম পুরুষতান্ত্রিকতার দিকে ঝুঁকে পরে, তা দেখানো হয়েছে।
বিষয়টির গভীরতা এতটাই যে, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমার পর্যন্ত এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
বর্তমান বিশ্বে পুরুষদের মধ্যে বিষাক্ত পৌরুষত্বের বিস্তার একটি গুরুতর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, অনলাইনে প্রভাবশালী কিছু পুরুষের প্ররোচনা এবং সমাজের বিদ্যমান পরিস্থিতি তরুণদের ভুল পথে চালিত করছে। খেলাধুলা অনেক সময় তরুণদের মধ্যে এই ধরনের মানসিকতার জন্ম দিতে পারে।
এই প্রেক্ষাপটে, বাস্কেটবল খেলোয়াড় থেকে মনোবিদ হওয়া জন অ্যামাছি সিএনএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, খেলাধুলা কিভাবে তরুণদের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
অ্যামাছির মতে, খেলাধুলার পরিবেশ যদি বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সহযোগী না হয়, তবে তা অনেক তরুণের জন্য এক ভীতিকর অভিজ্ঞতা নিয়ে আসে। খেলাধুলার জগৎ অনেক সময় দুর্বল এবং অন্তর্মুখী ছেলেদের জন্য প্রতিকূল হয়ে ওঠে, যেখানে তাদের দুর্বলতা নিয়ে উপহাস করা হয়।
অ্যামাছি তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে জানান, কিভাবে খেলাধুলা তার জীবন পরিবর্তন করে দিয়েছে। তিনি জানান, শৈশবে তিনি ছিলেন খুবই লাজুক এবং অন্তর্মুখী। খেলাধুলার প্রতি তার আগ্রহ ছিল কম। কিন্তু বাস্কেটবল খেলার সুযোগ পাওয়ার পর, সেখানকার ইতিবাচক পরিবেশ তাকে নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছিল।
খেলাধুলার সঠিক প্রয়োগ তরুণদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে পারে। অ্যামাছির মতে, খেলাধুলা এমন একটি স্থান যেখানে আবেগ প্রকাশকে উৎসাহিত করা হয়। দুঃখ পেলে একে অপরের প্রতি সহানুভূতি জানানো হয়, আবার জয়ের মুহূর্তে আনন্দের সাথে উদযাপন করা হয়। খেলাধুলা তরুণদের মধ্যে একতা ও ভালোবাসার বন্ধন তৈরি করতে পারে, যা তাদের মানসিক বিকাশে সহায়তা করে।
তবে, অ্যামাছি সতর্ক করে বলেন, খেলাধুলার সঙ্গে জড়িত সকলকে এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে। খেলাধুলার পরিবেশ যদি বন্ধুত্বপূর্ণ না হয়, তবে তা তরুণদের মধ্যে ভুল বার্তা দিতে পারে। অনেক সময় দেখা যায়, প্রশিক্ষকরা খেলাধুলাকে শুধুমাত্র কৌশল শেখানোর মাধ্যম হিসেবে দেখেন, যা তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
বাংলাদেশেও খেলাধুলার জগৎ তরুণদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এখানেও এমন অনেক ঘটনা রয়েছে, যেখানে খেলাধুলার পরিবেশ তরুণদের জন্য প্রতিকূল হয়ে ওঠে। উদাহরণস্বরূপ, অনেক সময় দেখা যায়, ভালো পারফর্ম করতে না পারায় তরুণ খেলোয়াড়দের নিয়ে উপহাস করা হয়। তাদের দুর্বলতাগুলো সামনে আনা হয়।
সুতরাং, খেলাধুলার মাধ্যমে তরুণদের মধ্যে ইতিবাচক মানসিকতা তৈরি করা সম্ভব। তবে, এর জন্য প্রয়োজন খেলাধুলার পরিবেশকে আরও বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সহযোগিতামূলক করে তোলা। একইসঙ্গে, প্রশিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট সকলের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। খেলাধুলাকে শুধু শারীরিক কসরতের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে, এটি কিভাবে তরুণদের মানসিক বিকাশে সাহায্য করতে পারে, সেদিকেও নজর দিতে হবে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন