মানসিক উদ্বেগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হওয়া ‘লোরাজেপাম’ (Lorazepam) ওষুধটি নিয়ে আজকাল বেশ আলোচনা হচ্ছে। সম্প্রতি, জনপ্রিয় টিভি সিরিজ ‘দ্য হোয়াইট লোটাস’-এ (The White Lotus) এই ওষুধটির ব্যবহার দেখা গেছে, যা অনেকের মনেই এই ওষুধটি সম্পর্কে আগ্রহ তৈরি করেছে।
আজকের লেখায় আমরা এই ওষুধের কার্যকারিতা, ঝুঁকি এবং ব্যবহারের সঠিক নিয়মাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
লোরাজেপাম আসলে ‘বেনজোডায়াজেপিন’ (benzodiazepine) নামক এক শ্রেণির ঔষধের অন্তর্ভুক্ত, যা উদ্বেগ (anxiety) এবং প্যানিক অ্যাটাক (panic attack)-এর মতো সমস্যাগুলোর চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এটি মস্তিষ্কের ‘গামা-অ্যামিনোবিউটাইরিক অ্যাসিড’ বা ‘গাবা’ (GABA) নামক একটি নিউরোট্রান্সমিটারের (neurotransmitter) কার্যক্রম বাড়িয়ে দেয়, যার ফলে এটি কিছুটা ঘুম-ঘুম ভাব তৈরি করে এবং উদ্বেগকে কমাতে সাহায্য করে।
অনেক সময় স্বল্পমেয়াদী ঘুমের সমস্যা সমাধানেও এটি ব্যবহার করা হয়।
তবে, লোরাজেপাম একটি শক্তিশালী ওষুধ এবং এর কিছু গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে। এটি সেবন করার সময় কিছু বিষয় মনে রাখা খুবই জরুরি।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এই ওষুধ সেবন করা উচিত নয়। এছাড়াও, লোরাজেপাম সেবনের সময় অ্যালকোহল (alcohol) বা অন্যান্য মাদকদ্রব্য গ্রহণ করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, এই দুটি বিষয় মিলিতভাবে স্নায়ুতন্ত্রের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে এবং শ্বাসকষ্ট বা এমনকি মৃত্যুর কারণও হতে পারে।
এই ওষুধের আরেকটি বড় সমস্যা হলো এর আসক্তি (addiction) তৈরির সম্ভাবনা। দীর্ঘদিন ধরে এই ওষুধ সেবন করলে এর প্রতি সহনশীলতা তৈরি হয়, অর্থাৎ একই ফল পাওয়ার জন্য ওষুধের মাত্রা বাড়াতে হয়। নিয়মিত সেবন বন্ধ করে দিলে কিছু শারীরিক ও মানসিক উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যেমন – রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া, ফ্লুর মতো অনুভূতি, বিভ্রান্তি ইত্যাদি।
তাই, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এবং নিয়ন্ত্রিতভাবে এই ওষুধ সেবন করা উচিত।
বাংলাদেশে উদ্বেগ একটি সাধারণ সমস্যা, এবং অনেক মানুষই এর সাথে লড়াই করে থাকেন। পরীক্ষার চাপ, ক্যারিয়ারের চিন্তা, পারিবারিক সমস্যা—এসব কারণে উদ্বেগের সৃষ্টি হতে পারে।
তবে, উদ্বেগের চিকিৎসার জন্য শুধু ওষুধের উপর নির্ভর না করে, অন্যান্য কিছু পদ্ধতিও অবলম্বন করা যেতে পারে। নিয়মিত ব্যায়াম (exercise), গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস (deep breathing) ব্যায়াম, এবং মনকে শান্ত করার চেষ্টা—এগুলো উদ্বেগের মোকাবিলায় সাহায্য করতে পারে। প্রয়োজনে একজন বিশেষজ্ঞ মনোবিদের (psychologist) পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
লোরাজেপাম একটি জরুরি ওষুধ হতে পারে, তবে এর সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতা খুবই দরকারি। নিজের ভালো থাকার জন্য, যেকোনো ওষুধ সেবনের আগে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
তথ্যসূত্র: সিএনএন