আগুনের পাশে বসে, নরম মার্শম্যালোর মিষ্টি গন্ধে বিভোর হয়ে, হাতে একটি “স’মোরস” (S’mores) – যেন এক টুকরো স্বর্গ! কিন্তু এই প্রিয় খাবারের জন্মকথা কি জানেন?
আসুন, আজ সেই অজানা গল্পটি শোনা যাক, যেখানে মিশে আছে একজন নারীর অদম্য চেষ্টা আর এক অসাধারণ উদ্ভাবনের কাহিনী।
বাস্তবে, “স’মোরস”-এর আসল উদ্ভাবক কোনো কল্পিত চরিত্র নয়, বরং তিনি হলেন ডরোথি ক্রিশ্চিয়ান “কুকি” মুর। ১৯২০-এর দশকে, এই ব্রিটিশ মহিলা, যিনি ছিলেন একজন “গার্ল গাইড” নেত্রী, আমেরিকায় এসে মেয়েদের মধ্যে নতুন কিছু করার স্বপ্ন নিয়ে এসেছিলেন।
তাঁর লক্ষ্য ছিল, মেয়েদের প্রকৃতির কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া, তাদের মধ্যে আত্মনির্ভরতা ও নেতৃত্বগুণ তৈরি করা।
কুকি মুর-এর হাত ধরেই “স’মোরস”-এর জন্ম। ১৯২৩ সালে, তিনি আমেরিকার “গার্ল স্কাউটস”-দের সঙ্গে কাজ শুরু করেন।
ক্যাম্পিংয়ের সময়, তিনি একটি সহজ অথচ সুস্বাদু ডেজার্ট তৈরির কথা ভাবেন। তাঁর সেই ভাবনা থেকেই তৈরি হয় “সোমোর” বা “সামোর” (Somemore)।
এটি ছিল গ্র্যাহাম ক্র্যাকার, চকোলেট এবং টোস্ট করা মার্শম্যালোর সমন্বয়ে তৈরি একটি মিষ্টি স্যান্ডউইচ। তাঁর এই রেসিপি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, বিশেষ করে ক্যাম্পিংয়ের সময় এটি ছিল অপরিহার্য।
কিন্তু এই সাফল্যের পেছনে লুকিয়ে আছে এক দুঃখজনক সত্য। “স’মোরস”-এর আসল কৃতিত্ব থেকে কুকি মুর-এর নাম প্রায় হারিয়ে গেছে।
অনেক ওয়েবসাইটে এই মিষ্টি তৈরির কৃতিত্ব অন্য কারো নামে দেওয়া হয়েছে, যা সম্পূর্ণ ভুল।
কুকি মুর-এর “ইননিসফ্রি” ক্যাম্পিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি ছিল মেয়েদের জন্য এক নতুন দিগন্ত। সেখানে তারা প্রকৃতির কাছাকাছি থেকে নেতৃত্ব, আত্মনির্ভরতা, এবং দলবদ্ধভাবে কাজ করার গুরুত্ব শিখেছিল।
কুকি মুর-এর উদ্ভাবনী চিন্তা ও ডেজার্ট তৈরির কৌশল, “গার্ল স্কাউটস”-এর ইতিহাসে এক নতুন মাত্রা যোগ করে। তাঁর হাত ধরে মেয়েদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বেড়েছিল, যা তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
“স’মোরস”-এর জন্মকথা আমাদের শিখিয়ে যায়, কীভাবে একটি সাধারণ ধারণা, একটি মানুষের চেষ্টা ও ভালোবাসার মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা পেতে পারে।
কুকি মুর-এর গল্প, আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ইতিহাসে অনেক অজানা নায়কের অবদান থাকে, যাদের স্বীকৃতি দেওয়াটা জরুরি।
তাই, যখন আপনি “স’মোরস” খাবেন, তখন কুকি মুর-এর কথা মনে রাখবেন, যিনি এই মিষ্টিটিকে আমাদের কাছে এনেছেন।
তথ্যসূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক