ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কের ঘোষণা, বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য যুদ্ধ: বাংলাদেশের জন্য শঙ্কার কারণ?
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন করে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের জেরে বিশ্বজুড়ে শুরু হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া। এই সিদ্ধান্তের ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বড় ধরনের ধাক্কা লাগতে পারে এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে দেখা দিতে পারে চরম অস্থিরতা।
বিভিন্ন দেশ এরই মধ্যে ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গত সপ্তাহে, হোয়াইট হাউসে এক ঘোষণার মাধ্যমে ট্রাম্প বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। এর ফলে, যুক্তরাষ্ট্র আমদানি করা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত কর বসাবে, যা বাণিজ্য ব্যয় বাড়িয়ে দেবে।
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের মূল লক্ষ্য হলো, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়া এবং বাণিজ্য ঘাটতি কমানো। তবে, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এর ফলস্বরূপ বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হতে পারে, যা অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হবে।
এই সিদ্ধান্তের জেরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোর। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র তাদের অন্যতম প্রধান বাজার। ভিয়েতনামের অর্থনীতির প্রায় ৩০ শতাংশ আসে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য থেকে।
দেশটির সরকার এরই মধ্যে পরিস্থিতি মোকাবিলায় একটি বিশেষ দল গঠন করেছে এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারাও ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে ‘ভুল’ এবং ‘নির্মম’ বলে অভিহিত করেছেন। তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন। তবে, এই বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
চীনও ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য আমদানির ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে এবং তাদের বাণিজ্য নীতিতে পরিবর্তন এনেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, চীন এই পরিস্থিতিকে নিজেদের বাণিজ্য সম্প্রসারণের সুযোগ হিসেবে দেখছে। তারা বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করছে।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ রয়েছে। কারণ, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের একটি বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়।
ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে এই রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এতে দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, বিশেষ করে পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের চাকরি হারানোর সম্ভবনা রয়েছে।
তবে, কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, বিশ্ব বাণিজ্য পরিস্থিতিতে পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের জন্য নতুন সুযোগও আসতে পারে। চীনসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করার মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করা যেতে পারে।
এক্ষেত্রে, সরকারের উপযুক্ত নীতি গ্রহণ করা জরুরি।
যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক নীতির ফলে বিশ্ব অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বাণিজ্য যুদ্ধ এড়াতে দেশগুলোকে আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধানে পৌঁছাতে হবে।
একইসঙ্গে, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে নিজেদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে এবং বিশ্ব বাণিজ্যের পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে প্রস্তুতি নিতে হবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান