বর্তমান কর্মপরিবেশে প্রায়ই শোনা যায়, কোনো কোনো কর্মকর্তার মধ্যে আত্ম-প্রেমের প্রবণতা বা নার্সিসিজমের (Narcissism) ছায়া দেখা যায়। সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা গেছে, এর পেছনে থাকতে পারে নিয়োগকর্তাদের ব্যবহৃত কিছু শব্দ, যা আসলে আকর্ষণ করে আত্ম-প্রবণ ব্যক্তিদের।
যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টেসি বিভাগের অধ্যাপক জোনাথন গে এবং তাঁর সহকর্মীরা কর্মীর অনুসন্ধানে ব্যবহৃত ভাষার ওপর একটি গবেষণা চালান। তাঁরা দেখেন, কিছু বিশেষ শব্দ ব্যবহার করে তৈরি করা চাকরির বিজ্ঞাপন আকৃষ্ট করে আত্ম-প্রেমী বা নার্সিসিস্ট (Narcissist) প্রার্থীদের।
গবেষণায় মূলত দুটি ধরনের শব্দগুচ্ছের ওপর জোর দেওয়া হয়: একটি দল ‘নিয়ম-অনুসারী’ এবং অন্যটি ‘নিয়ম ভাঙতে আগ্রহী’ প্রার্থীদের আকৃষ্ট করে।
গবেষকরা বেশ কিছু চাকরির বিজ্ঞাপন তৈরি করেন, যেখানে একদিকে ‘নিয়ম-অনুসারী’ এবং অন্যদিকে ‘নিয়ম ভাঙতে আগ্রহী’ – এমন শব্দ ব্যবহার করা হয়। ‘নিয়ম-অনুসারী’ শব্দগুচ্ছের মধ্যে ছিল–‘দলবদ্ধভাবে কাজ করতে আগ্রহী’, ‘নিয়মতান্ত্রিকভাবে চিন্তা করতে পারেন’ এবং ‘সরাসরি ও নির্ভুলভাবে যোগাযোগ করেন’। অন্যদিকে, ‘নিয়ম ভাঙতে আগ্রহী’ শব্দগুলোর মধ্যে ছিল–‘উদ্যমী ও আত্মনির্ভরশীল’, ‘ গতানুগতিক ধারার বাইরে চিন্তা করতে পারেন’ এবং ‘কৌশলী ও আকর্ষণীয়ভাবে যোগাযোগ করতে পটু’।
এরপর অংশগ্রহণকারীদের এই বিজ্ঞাপনগুলোর প্রতি তাঁদের আগ্রহ যাচাই করতে বলা হয়। একই সঙ্গে তাঁদের আত্ম-প্রেমের প্রবণতাও মূল্যায়ন করা হয়।
গবেষণায় দেখা যায়, ‘নিয়ম ভাঙতে আগ্রহী’ শব্দ ব্যবহার করা বিজ্ঞাপনগুলো সাধারণত আত্ম-প্রেমী প্রার্থীদের বেশি আকৃষ্ট করে।
জোনাথন গে তাঁর গবেষণায় উল্লেখ করেন, “এই ধরনের ব্যক্তিরা নিজেদের সৃজনশীল এবং প্রভাবশালী মনে করেন।” এই গবেষণার ফল ‘ম্যানেজমেন্ট সায়েন্স’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
এই গবেষণার ফল থেকে কোম্পানিগুলোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পাওয়া যায়। চাকরির বিজ্ঞাপনে ‘ফলাফল- ориентиত’, ‘সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী’ অথবা ‘নমনীয় ও কৌশলগত’ – এই ধরনের শব্দ ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।
কারণ, এগুলো আত্ম-প্রেমী প্রার্থীদের আকৃষ্ট করতে পারে। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, আত্ম-প্রেমী মানুষেরা অনেক সময় নিয়ম ভাঙতে পারদর্শী হন এবং এতে তাঁরা সাফল্যও পান, তবে তাঁদের মধ্যে অনৈতিক কাজ করার প্রবণতাও থাকতে পারে।
তবে, এই গবেষণা থেকে এটাও স্পষ্ট হয় যে, সব ক্ষেত্রে এই ধরনের মানুষেরা খারাপ নন।
বিশেষ করে, বিক্রয় ও বিপণনের মতো পেশায় তাঁদের দক্ষতা অনেক সময় ইতিবাচক ফল দেয়। তবে হিসাবরক্ষণ বা আর্থিক ব্যবস্থাপনার মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে তাঁদের নিয়োগ করা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
গবেষকরা বলছেন, কোনো ব্যক্তি যদি ‘নিয়ম ভাঙতে আগ্রহী’ শব্দগুলোর প্রতি আকৃষ্ট হন, তার মানে এই নয় যে তিনি অবশ্যই আত্ম-প্রেমী।
তবে গবেষণায় দেখা গেছে, আত্ম-প্রেমের প্রবণতা রয়েছে এমন ব্যক্তিরা সাধারণত এই ধরনের শব্দগুলোর প্রতি বেশি আকৃষ্ট হন।
সুতরাং, কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে ভাষার ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সঠিক শব্দ ব্যবহার করে যোগ্য ও নৈতিক কর্মীদের আকৃষ্ট করা সম্ভব, যা একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান