বিশ্বজুড়ে মৃত্যুদণ্ডের ঘটনা: গত এক দশকে সর্বোচ্চ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্ট।
মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল (Amnesty International)-এর নতুন একটি রিপোর্টে জানা গেছে, ২০২৪ সালে বিশ্বে মৃত্যুদণ্ডের ঘটনা গত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। সংস্থাটির বার্ষিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বিশ্বে গত বছর ১৫১৮ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৩২ শতাংশ বেশি।
২০১৫ সালের পর থেকে মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা এটিই সর্বোচ্চ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদিও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা দেশের সংখ্যা কমেছে, কিন্তু কয়েকটি দেশে মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে ইরান, ইরাক এবং সৌদি আরবের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
এই তিনটি দেশ একাই বিশ্বের মোট মৃত্যুদণ্ডের ৯১ শতাংশের জন্য দায়ী।
প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র ইরানেই গত বছর ৯৭২ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ১১৯ জন বেশি। এদের মধ্যে ৩০ জন নারীও ছিলেন।
এছাড়া, ইরাকে মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা প্রায় চারগুণ বৃদ্ধি পেয়ে অন্তত ১৬ থেকে ৬৩ জনে দাঁড়িয়েছে।
সৌদি আরবেও মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। দেশটিতে গত বছর অন্তত ৩৪৫ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, যেখানে আগের বছর এই সংখ্যা ছিল ১৭২।
আফ্রিকার দেশ মিশর, সিঙ্গাপুর এবং ইয়েমেনেও মৃত্যুদণ্ডের ঘটনা বেড়েছে। মিশরে আট জন থেকে বেড়ে ১৩ জন, সিঙ্গাপুরে পাঁচ জন থেকে বেড়ে নয় জন এবং ইয়েমেনে ১৫ জন থেকে বেড়ে ৩৮ জনে দাঁড়িয়েছে মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা।
অন্যদিকে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, বিশ্বে বর্তমানে ১৫টি দেশে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
এটিও একটি রেকর্ড।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড (Agnès Callamard) বলেছেন, মৃত্যুদণ্ড প্রদানকারী দেশগুলো একটি “বিচ্ছিন্ন সংখ্যালঘু”-তে পরিণত হচ্ছে।
তিনি একে “নিষ্ঠুর, অমানবিক এবং অবমাননাকর শাস্তি” হিসেবেও উল্লেখ করেছেন।
তবে তিনি আরও যোগ করেন, কিছু দেশে জননিরাপত্তা বাড়ানোর মিথ্যা অজুহাতে এবং ইরান ও সৌদি আরবের মতো কিছু দেশে ভিন্ন মতাবলম্বীদের কণ্ঠরোধ করতে মৃত্যুদণ্ডকে ব্যবহার করা হচ্ছে।
রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, মাদক-সংক্রান্ত অপরাধের কারণে বিশ্বের মোট মৃত্যুদণ্ডের ৪০ শতাংশের বেশি ঘটনা ঘটেছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল একে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং তাদের মতে, মাদক পাচার রোধে এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান