রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিন্নতা নিয়ে বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে পড়াটা আজকাল যেন একটা সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চারপাশে রাজনৈতিক বিভাজন বাড়ছে, আর এর জেরে সম্পর্কের মধ্যে ফাটল ধরছে অহরহ।
এই ধরনের আলোচনাগুলো কি সবসময় ফলপ্রসূ হয়? বরং অনেক সময় দেখা যায়, এতে মানসিক চাপ বাড়ে, সম্পর্কের অবনতি হয় এবং কোনো সমাধানও আসে না।
আমিও একসময় আমার বন্ধু এবং পরিবারের সঙ্গে রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে প্রায়ই তর্কে লিপ্ত হতাম। বিষয়গুলো হয়তো ছিল দেশের উন্নয়ন, শিক্ষা ব্যবস্থা অথবা সামাজিক কোনো সমস্যা নিয়ে আলোচনা।
কথার শুরুতে হয়তো সবাই শান্ত ছিল, কিন্তু ধীরে ধীরে তা উত্তপ্ত বিতর্কে রূপ নিতো। উচ্চকিত কণ্ঠ, পরস্পরকে দোষারোপ করা, এবং শেষে তিক্ততা—এটাই ছিল যেন স্বাভাবিক পরিণতি।
আলোচনার শেষে কেউই হয়তো নিজেদের অবস্থানে পরিবর্তন আনতো না, বরং সম্পর্কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতো।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমি বুঝতে পারলাম, এই ধরনের বিতর্কের কোনো মানে নেই। বরং এতে শান্তি নষ্ট হয়, যা সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর।
তাই, আমি ধীরে ধীরে এই ধরনের তর্ক এড়িয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। যখনই কোনো বিষয়ে ভিন্নমত পোষণকারী কারো সঙ্গে কথা বলতে শুরু করতাম, আমি হয় আলোচনার বিষয় পরিবর্তন করতাম, না হয় নরম সুরে তার কথা শোনার চেষ্টা করতাম।
“বিষয়টা বেশ জটিল, তাই না?”—এই ধরনের মন্তব্য করে আমি বিতর্ক এড়িয়ে যেতাম।
আসলে, সমাজে যখন বিভেদ বাড়ে, তখন আমরা আমাদের আপনজনদের সম্পর্কেও ভিন্ন ধারণা পোষণ করতে শুরু করি। বিশেষ করে, যাদের সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক বা সামাজিক মতের মিল হয় না, তাদের সম্পর্কে আমাদের মনে সন্দেহ জাগে।
আমরা মনে করি, তারা হয়তো ভুল পথে আছে, তাদের চিন্তা-ভাবনা আমাদের থেকে অনেক দূরে। কিন্তু সবসময় কি তাই হয়?
নিজের বিশ্বাসের পরীক্ষা করা ভালো, তবে তা প্রিয়জনদের সঙ্গে সম্পর্কের বিনিময়ে নয়। বিতর্ক এড়িয়ে যাওয়াকে দুর্বলতা মনে হতে পারে, বিশেষ করে যখন গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছে।
কিন্তু আমি মনে করি, এটা আসলে সম্পর্কের প্রতি সম্মান জানানো। আমি এখন বিতর্কের বদলে সাধারণ ভিত্তি খুঁজে বের করার চেষ্টা করি।
আমি বোঝার চেষ্টা করি, মানুষ কেন একটি নির্দিষ্ট অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে। এতে হয়তো সবসময় সমাধান পাওয়া যায় না, তবে সম্পর্কের উষ্ণতা বজায় থাকে।
আসলে, পরিবার এবং বন্ধুদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখাটা অনেক বেশি জরুরি। রাজনৈতিক বা সামাজিক মতপার্থক্যের কারণে সেই সম্পর্ক নষ্ট হতে দেওয়া উচিত নয়।
আসুন, আমরা সবাই চেষ্টা করি, বিতর্কের বদলে ভালোবাসার বন্ধনটাকে আরও দৃঢ় করতে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান