“গেম অফ থ্রোনস”-এর ভীতিকর নেকড়ের কথা মনে আছে? সেই আদিম নেকড়ে প্রজাতিকে বিজ্ঞানীরা ফিরিয়ে এনেছেন! সম্প্রতি, একটি মার্কিন বায়োটেক কোম্পানি ঘোষণা করেছে যে তারা বিলুপ্তপ্রায় ‘ডায়র উলফ’ (dire wolf) -এর তিনটি শাবক তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।
প্রায় ১,২৫০০ বছর আগে এই প্রজাতির নেকড়ের বিলুপ্তি ঘটেছিল।
টেক্সাসের ডালাস-ভিত্তিক বায়োটেক কোম্পানি ‘কলোসাল বায়োসায়েন্সেস’ (Colossal Biosciences) জানিয়েছে, তারা প্রাচীন ডিএনএ, ক্লোনিং এবং জিন-এডিটিং প্রযুক্তির মাধ্যমে ধূসর নেকড়ের (gray wolf) জিন পরিবর্তন করে এই কাজটি করেছে। এই ধূসর নেকড়েরা ‘ডায়র উলফ’-এর নিকটতম প্রজাতি।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর ফলে মূলত একটি সংকর প্রজাতি তৈরি হয়েছে, যা দেখতে বিলুপ্তপ্রায় পূর্বসূরীর মতোই।
‘ডায়র উলফ’ এক সময় উত্তর আমেরিকায় ঘুরে বেড়াতো এবং শক্তিশালী শিকারী হিসেবে পরিচিত ছিল। এরা ধূসর নেকড়ের চেয়ে আকারে বড় ছিল, এদের মাথা ছিল সামান্য চওড়া, লোম ছিল ঘন এবং চোয়াল ছিল শক্তিশালী।
কলোসাল বায়োসায়েন্সেস-এর বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, তারা ১৩,০০০ বছর আগের দাঁত এবং ৭২,০০০ বছর আগের খুলি থেকে পাওয়া ডিএনএ ব্যবহার করে এই কাজটি করেছেন।
কোম্পানির সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বেন ল্যাম এক বিবৃতিতে বলেছেন, “এই বিশাল সাফল্য আমাদের ডি-এক্সটিঙ্কশন প্রযুক্তির সক্ষমতার প্রমাণ। আমরা এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকটি সাফল্য অর্জন করেছি।”
জানা গেছে, এই তিনটি ডায়র উলফ শাবককে একটি গোপন স্থানে প্রায় ২০০০ একর জায়গা জুড়ে তৈরি করা হয়েছে। সেখানে ১০ ফুট উঁচু বেড়া দেওয়া হয়েছে এবং নিরাপত্তা কর্মী, ড্রোন ও লাইভ ক্যামেরা ফিডের মাধ্যমে তাদের উপর নজর রাখা হচ্ছে।
কোম্পানিটি জানিয়েছে, এই স্থানটি আমেরিকান হিউম্যান সোসাইটি কর্তৃক অনুমোদিত এবং ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচারে নিবন্ধিত।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, তারা ডায়র উলফের দুটি সম্পূর্ণ জিনোম (genome) তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। এরপর তারা ধূসর নেকড়ের কোষ পরিবর্তন করে ১৪টি জিনের ২০টি পরিবর্তন করেন।
এরপর সবচেয়ে উপযুক্ত কোষ লাইনগুলো ক্লোন করে সেগুলোকে অন্য প্রাণীর ডিম্বাণুতে স্থাপন করা হয়। কলোসাল বায়োসায়েন্সেস জানায়, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তিনটি শাবকের জন্ম হয়েছে।
এদের মধ্যে দুটি পুরুষ এবং একটি স্ত্রী। প্রথম দুটি শাবক জন্ম নেয় অক্টোবর মাসের ১ তারিখে, এবং স্ত্রী শাবকটির জন্ম হয় ২০২৫ সালের ৩০শে জানুয়ারি।
তবে এই কাজটি নিয়ে বিতর্কও রয়েছে।
অনেকে মনে করেন, বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি ফিরিয়ে আনার পেছনে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ না করে, তা অন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজে লাগানো উচিত। আবার, এই ধরনের প্রাণী তৈরি করা জীববৈচিত্র্যের জন্য কতটা উপযোগী, সেই প্রশ্নও থেকে যায়।
তবে কলোসাল বায়োসায়েন্সেস জানাচ্ছে, তারা শুধু ডায়র উলফ নয়, বরং অন্যান্য বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী, যেমন—ম্যামথ, ডোডো এবং তাসমানিয়ান টাইগার ফিরিয়ে আনারও চেষ্টা করছে।
তারা মনে করে, এই প্রযুক্তি বিপন্নপ্রায় প্রাণী সংরক্ষণে সাহায্য করতে পারে। তারা এরই মধ্যে লাল নেকড়ের (red wolf) দুটি শাবক তৈরি করেছে, যা একটি গুরুতর বিপন্নপ্রায় প্রজাতি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন