আধুনিক বিশ্বে ব্যবসা-বাণিজ্য দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে, এবং এর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে প্রয়োজন সময়োপযোগী কর্মপদ্ধতি। প্রকল্প ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও এসেছে নতুনত্ব। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের মতো, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরাও এখন এই পরিবর্তনের সাক্ষী।
প্রকল্প ব্যবস্থাপনার উন্নত সরঞ্জাম ব্যবহারের মাধ্যমে কিভাবে ব্যবসার উন্নতি করা যায়, সেই বিষয়ে একটি দৃষ্টান্ত হলো আন্তর্জাতিক ক্রেন প্রস্তুতকারক কোম্পানি Palfinger-এর অভিজ্ঞতা।
Palfinger, বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ক্রেন ও উত্তোলন সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক একটি প্রতিষ্ঠান। তাদের ব্যবসা বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত। এই বিশাল কর্মযজ্ঞকে আরও সুসংহত করতে, Palfinger একটি নতুন পদ্ধতি গ্রহণ করেছে।
তারা তাদের প্রকল্প ব্যবস্থাপনার জন্য ‘স্মার্টশীট’ নামের একটি সফটওয়্যার ব্যবহার শুরু করে। এর ফলে বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি পেয়েছে, কাজের গতি বেড়েছে এবং ব্যবস্থাপনার কাজ সহজ হয়েছে।
Palfinger-এর বৈশ্বিক প্রকল্প ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান নাদির দাউদু ২০২০ সালে স্মার্টশীট পরীক্ষা করেন। তিনি এর সরল ডিজাইন, সহজে ব্যবহারযোগ্যতা এবং শক্তিশালী রিপোর্টিং ক্ষমতা দেখে খুবই মুগ্ধ হয়েছিলেন। তাঁর মতে, এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে তারা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী একটি ব্যবস্থা তৈরি করতে পেরেছে, যেখানে বাইরের কারো সাহায্যের প্রয়োজন হয়নি।
স্মার্টশীট ব্যবহারের ফলে Palfinger-এর প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। ২০২২ সালে যেখানে মাত্র ৫০টি প্রকল্পে এই সফটওয়্যার ব্যবহার করা হতো, বর্তমানে সেই সংখ্যা বেড়ে প্রায় ৩৫০-এ দাঁড়িয়েছে।
এর মধ্যে সার্বিয়ার নতুন একটি উৎপাদন কেন্দ্র তৈরি এবং ইউরোপ থেকে ল্যাটিন আমেরিকায় পণ্য অ্যাসেম্বলি স্থানান্তরের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোও ছিল।
এই সফটওয়্যারের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো বিভিন্ন প্রকল্পের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান সহজ হয়। এর মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা যায়, যা ব্যবস্থাপকদের জন্য প্রকল্পের অগ্রগতি তুলনা করতে এবং বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে সাহায্য করে।
স্মার্টশীটের মাধ্যমে, Palfinger একটি স্ট্যান্ডার্ড টেমপ্লেটের লাইব্রেরি তৈরি করেছে, যা নতুন প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু সরবরাহ করে।
আগে Palfinger-এর ব্যবসায়িক কাঠামো একক ইউনিটের উপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু তারা এখন একটি ম্যাট্রিক্স কাঠামোতে কাজ করে। এই পদ্ধতিতে কর্মীরা একাধিক ম্যানেজারের অধীনে কাজ করেন এবং বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি পায়।
এই পরিবর্তনের ফলে স্বচ্ছতা ও কার্যকর যোগাযোগের প্রয়োজনীয়তা বাড়ে, যা স্মার্টশীটের মতো সরঞ্জাম ব্যবহার করে সহজেই পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে।
নাদির দাউদ বলেন, স্মার্টশীটের ব্যবহারের ফলে ইমেলের আদান-প্রদান এবং মিটিংয়ের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এছাড়া, রিপোর্টিংয়ের সহজ সুবিধা কর্মীদের কাছে খুবই জনপ্রিয়।
তাঁর মতে, এই সফটওয়্যারটি ব্যবহার করা খুবই সহজ এবং এটি কর্মীদের ক্ষমতায়ন করে।
ভবিষ্যতে Palfinger-এর আরও বেশি প্রকল্পে স্মার্টশীট ব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েছে। দাউদু মনে করেন, বর্তমান অস্থির বিশ্বে টিকে থাকতে হলে ব্যবসার জন্য নমনীয়তা এবং কর্মীদের ক্ষমতায়ন খুবই জরুরি।
স্মার্টশীটের মতো সরঞ্জাম তাদের প্রক্রিয়াগুলো দ্রুত পরিবর্তন করতে সাহায্য করে।
Palfinger-এর এই অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হতে পারে। প্রকল্প ব্যবস্থাপনার আধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহারের মাধ্যমে, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরাও তাদের কার্যক্রম আরও দক্ষ ও ফলপ্রসূ করতে পারে।
স্মার্টশীটের মতো সরঞ্জাম ব্যবসার জটিলতা কমিয়ে কর্মপরিবেশকে আরও উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।
তথ্য সূত্র: The Guardian