আকাশ পথে যাত্রা অনেকের কাছেই এখন একটি সাধারণ অভিজ্ঞতা। কিন্তু বিমানের ওড়ার সময় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মুহূর্তগুলো কী, তা কি আমরা জানি?
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে বিমান চলাচলের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। উড়োজাহাজের নিরাপত্তা সবসময় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আর এই বিষয়ে নতুন কিছু তথ্য উঠে এসেছে।
আসুন, জেনে নেওয়া যাক বিমান ভ্রমণের সময় কোন বিষয়গুলো সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির কারণ হয়।
সাধারণভাবে, আকাশে হাজার হাজার ফুট উপরে বিমান ওড়া নিরাপদ মনে হলেও, বিমান বিশেষজ্ঞরা বলছেন আসল বিপদ লুকিয়ে থাকে অন্য জায়গায়। বিমানের টেক-অফ (উড্ডয়ন) এবং ল্যান্ডিংয়ের (অবতরণ) সময় সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভবনা থাকে।
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা আবারও সেই বিষয়টি মনে করিয়ে দেয়।
উদাহরণস্বরূপ, গত ২৯শে জানুয়ারী, ওয়াশিংটন ন্যাশনাল এয়ারপোর্টে একটি প্রশিক্ষণরত ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারের সঙ্গে একটি বিমানের সংঘর্ষ হয়। এছাড়াও, টেক-অফের আগে একটি ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের বিমানে ইঞ্জিন থেকে আগুন ধরে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছিল, যার ফলে জরুরি অবতরণ করতে হয়। এমন আরও অনেক ঘটনা প্রায়ই শোনা যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টেক-অফ এবং ল্যান্ডিংয়ের সময় পাইলটদের উপর সবচেয়ে বেশি চাপ থাকে। কারণ এই সময়টাতে বিমানের গতি নিয়ন্ত্রণ, বিমানবন্দরের কাছাকাছি আসা এবং অন্যান্য বিমানের সঙ্গে সমন্বয়ের মতো বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই সময়ে সামান্য ভুলের কারণে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভবনা থাকে। আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থার (International Air Transport Association – IATA) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে হওয়া মোট দুর্ঘটনার মধ্যে টেক-অফের সময় হয়েছে ১২৪টি এবং ল্যান্ডিংয়ের সময় ঘটেছে ৭৭০টি।
বিমানবন্দরের কাছাকাছি আসার সময় পাইলটদের মনোযোগ সবচেয়ে বেশি জরুরি। তাই এই সময়টাতে ‘স্টেরাইল ককপিট’ (Sterile Cockpit) নিয়ম পালন করা হয়।
এর মানে হলো, ১০,০০০ ফুটের নিচে থাকাকালীন সময়ে পাইলট এবং ক্রু-মেম্বারদের অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা বা অন্য কোনো কাজে মনোযোগ দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হয়, যাতে তারা পুরো মনোযোগ দিয়ে বিমান পরিচালনা করতে পারেন।
তবে আশার কথা হলো, বিমান সংস্থাগুলো তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ক্রমাগত উন্নত করার চেষ্টা করছে। পাইলটদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এবং প্রতিটি পদক্ষেপ সতর্কতার সাথে নিরীক্ষণ করা হয়।
এছাড়া, এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলার এবং অন্যান্য কর্মীরাও তাদের দায়িত্ব পালনে সদা তৎপর থাকেন।
ছোট আকারের বিমান বা ব্যক্তিগত উড়োজাহাজের ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার হার বেশি হতে দেখা যায়, তবে এতে হতাহতের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম থাকে।
বিমান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণ বিমান চলাচলের ক্ষেত্রেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ক্রমাগত উন্নত হচ্ছে।
বিমানযাত্রা নিরাপদ রাখতে সরকার, বিমান সংস্থা এবং কর্মীদের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। যাত্রী এবং ক্রু-মেম্বারদের জীবন রক্ষায় নিরাপত্তা বিষয়ক নিয়মকানুন মেনে চলা এবং নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
এই নিবন্ধটি আন্তর্জাতিক সংস্থা, যেমন ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FAA), ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড (NTSB), এবং আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থা (IATA) থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে।
তথ্য সূত্র: CNN