যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন করে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যেতে পারে এবং তা দীর্ঘ সময় ধরে চলতে পারে বলে সতর্ক করেছেন ফেডারেল রিজার্ভের প্রধান জেরোম পাওয়েল। এই শুল্ক নীতিমালার ফলে কর্মসংস্থান কমে গিয়ে অর্থনীতির গতি কমে যেতে পারে, এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন তিনি।
ওয়াশিংটন ডিসির কাছে এক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে পাওয়েল বলেন, এই মুহূর্তে উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং বেকারত্ব উভয়ই বাড়ার ঝুঁকি রয়েছে। ট্রাম্পের এই শুল্কনীতি সম্ভবত মূল্যস্ফীতিকে সাময়িকভাবে বাড়াবে, তবে এর প্রভাব দীর্ঘস্থায়ীও হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, ট্রাম্পের এই শুল্কনীতি বহাল থাকলে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভকে কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হতে পারে। কারণ, তাদের একইসঙ্গে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই শুল্ক নীতির কারণে বাজারে গাড়ির দামসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়তে পারে। এমনকি, পরিস্থিতি এমন হতে পারে যে অর্থনীতির ‘স্ট্যাগফ্লেশন’-এর দিকে যাওয়ারও সম্ভবনা রয়েছে। ‘স্ট্যাগফ্লেশন’ হলো এমন একটি অবস্থা, যেখানে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যায়, বেকারত্ব বাড়ে এবং একইসঙ্গে মূল্যস্ফীতিও বাড়তে থাকে।
এদিকে, ফেডারেল রিজার্ভের কর্মকর্তারা সুদের হার অপরিবর্তিত রেখেছেন। তারা মূল্যস্ফীতি কমার জন্য এবং ট্রাম্পের নীতিমালার অর্থনৈতিক প্রভাব দেখার জন্য অপেক্ষা করছেন। গত বছর কয়েক দফা সুদের হার কমানো হলেও, নতুন বছরে সেই ধারা থেমে যায়।
এই পরিস্থিতিতে, যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তা এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। মার্চ মাসে ভোক্তাদের আত্মবিশ্বাসের সূচক কমে যায়, যা ২০২১ সালের জানুয়ারির পর সর্বনিম্ন। এছাড়া, ব্যবসায়ীদের মধ্যে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তাও বেড়েছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, যদি এই অনিশ্চয়তা চলতে থাকে, তাহলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বাধা সৃষ্টি হতে পারে। ফেডারেল রিজার্ভের ভাইস চেয়ার ফিলিপ জেফারসনও একই ধরনের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে চীনও পাল্টা ব্যবস্থা নিতে পারে। এছাড়া, অন্যান্য দেশও এর প্রতিক্রয়া জানাতে পারে, যা বিশ্ব অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ফেডারেল রিজার্ভের জন্য এখন সবচেয়ে ভালো পদক্ষেপ হলো সুদের হার স্থিতিশীল রাখা। আগামী ৬-৭ মে ফেডারেল রিজার্ভ নীতি নির্ধারণের জন্য বৈঠকে বসবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন