ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন করে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের মাধ্যমে তিনি বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে চাইছেন।
যদিও যুক্তরাষ্ট্র এখনো বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপগুলো দীর্ঘমেয়াদে দেশটির অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে পারে।
ট্রাম্পের নীতি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য দেশ থেকে বাণিজ্যিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাঁর মতে, কিছু দেশ যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ‘অন্যায্য’ আচরণ করে এবং নিজেদের পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে সুবিধা আদায় করে।
এই অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করেছেন। এর ফলে চীন, ইউরোপ, মেক্সিকো, জাপান ও কানাডার মতো দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের কারণে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক অস্থিরতা বাড়ছে। তাঁরা মনে করেন, শুল্ক বৃদ্ধির ফলে একদিকে যেমন পণ্যের দাম বাড়তে পারে, তেমনি ব্যবসার ক্ষেত্রেও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হবে।
এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিবিদদের একাংশ মনে করেন, বাণিজ্য ঘাটতি কোনো দেশের দুর্বলতার লক্ষণ নয়। বরং আমেরিকার মানুষের বেশি খরচ করার প্রবণতার কারণে বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে।
তাঁদের মতে, যদি আমেরিকানরা সঞ্চয়ে বেশি মনোযোগ দিত, তাহলে বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসত।
বর্তমানে, চীন বিশ্বের বৃহত্তম পণ্য রপ্তানিকারক দেশ। এরপরেই যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ৩.১ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য ও পরিষেবা রপ্তানি করেছে।
যদিও দেশটির বাণিজ্য ঘাটতি অনেক বেশি, যা প্রায় ৯১৮ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ১,০০,০০০ কোটি টাকার বেশি)।
ট্রাম্প প্রশাসন মনে করে, বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে শুল্ক বৃদ্ধি করা জরুরি। তারা বিশ্বাস করে, এর মাধ্যমে বিদেশি পণ্যের ওপর নির্ভরতা কমবে এবং দেশের উৎপাদন বাড়বে।
তবে অর্থনীতিবিদদের অনেকে এই যুক্তির সঙ্গে একমত নন। তাঁদের মতে, বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর জন্য অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক সংস্কারের দিকে নজর দেওয়া উচিত।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই বাণিজ্যনীতির কারণে মার্কিন শেয়ার বাজারেও প্রভাব পড়েছে। শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর থেকে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ১২ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে।
অন্যদিকে, কিছু অর্থনীতিবিদ মনে করেন, নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে শুল্ক নীতি গ্রহণ করা যেতে পারে, যা যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পখাতকে সুরক্ষা দিতে সহায়তা করবে।
কিন্তু তাঁদের মতে, ট্রাম্পের নেওয়া পদক্ষেপগুলো হিতে বিপরীত হতে পারে এবং মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও খারাপ করতে পারে।
মোটকথা, ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি বিশ্ব অর্থনীতিতে এক নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এর ফলস্বরূপ বাণিজ্য সম্পর্ক, বাজারের স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস