যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক বর্তমানে নতুন মোড় নিয়েছে। সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের সরকার দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়তে শুরু করেছে কোরিয়ান সৌন্দর্য পণ্য বা কে-বিউটির বাজারে।
বিশেষ করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কোরিয়ান স্কিনকেয়ার পণ্যের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার কারণে এই শুল্ক বৃদ্ধি ভোক্তাদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
**কে-বিউটির জনপ্রিয়তা ও শুল্কের প্রভাব**
গত এক দশকে, কোরিয়ান স্কিনকেয়ার পণ্যগুলো বিশ্বজুড়ে, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বর্তমানে, ফ্রান্সের চেয়েও বেশি, প্রায় ১.৭ বিলিয়ন ডলার মূল্যের প্রসাধনী সামগ্রী দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আমদানি করে যুক্তরাষ্ট্র।
এই বাজারে কোরিয়ান ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে অ্যামোর প্যাসিফিকের মতো বৃহৎ কোম্পানিও রয়েছে, যাদের বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ গ্রাহক রয়েছে। শুধু তাই নয়, অ্যামোর প্যাসিফিকের আমেরিকায় বিক্রি হওয়া পণ্যের পরিমাণ প্রথমবারের মতো চীনকেও ছাড়িয়ে গেছে।
কোরিয়ান স্কিনকেয়ার পণ্যের মূল আকর্ষণ হলো এর সাশ্রয়ী মূল্য এবং উন্নত উপাদান, বিশেষ করে সানস্ক্রিন। এই পণ্যগুলোতে আধুনিক ইউভিএ এবং ইউভিবি ফিল্টার ব্যবহার করা হয়, যা এখনো যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) কর্তৃক অনুমোদিত নয়।
ফলে, আমেরিকান ভোক্তাদের জন্য এই পণ্যগুলোর কোনো বিকল্প নেই। এমন পরিস্থিতিতে, ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কনীতি বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে, যা পণ্যের দাম বাড়াতে পারে এবং সম্ভবত উৎপাদন প্রক্রিয়াতেও পরিবর্তন আনতে পারে।
**ব্যবসায়ীদের প্রতিক্রিয়া ও বাজারের ভবিষ্যৎ**
শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর, অনেক ছোট ব্যবসায়ী, যেমন – ‘অলিভ কালেকশন’-এর মালিক ক্রিস্টিনা ইম, তাদের ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য মজুদ করতে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছেন। সাধারণত, যেখানে তারা প্রতি সপ্তাহে ৫,০০০ থেকে ১০,০০০ ডলারের পণ্য কেনেন, সেখানে শুল্কের কারণে তারা প্রায় ৪০,০০০ ডলারের পণ্য কিনেছেন।
যদিও ব্যবসায়ীরা আপাতত এই অতিরিক্ত খরচ কিছুটা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিতে চাইছেন, তবে তারা এটাও জানেন যে, ভোক্তারা এখন তাদের কেনাকাটা কমিয়ে দিতে পারেন। ক্রিস্টিনা ইম আশা করছেন, তারা দাম খুব বেশি বাড়াবেন না, কিন্তু এই শুল্কের কারণে প্রায় ১০ শতাংশ দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে, কোরিয়ান স্কিনকেয়ার ব্র্যান্ড ‘ক্র্যাভবিউটি’ জানিয়েছে, তাদের পণ্যের দাম এখনো ২৮ ডলারের নিচে থাকলেও, নতুন শুল্কের কারণে তাদেরও দাম বাড়াতে হতে পারে। এছাড়া, ‘ইয়েসস্টাইল’ এবং ‘স্টাইলভানা’-এর মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো, যেখান থেকে ভোক্তারা সরাসরি পণ্য কেনেন, তারাও দাম বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছে।
কারণ, এই প্ল্যাটফর্মগুলোর প্রধান গুদামগুলো হংকংয়ে অবস্থিত, এবং ট্রাম্প প্রশাসন চীন ও হংকং থেকে আসা পণ্যের ওপর শুল্কমুক্ত সুবিধা (ডি মিনিমিস) বাতিল করেছে, যার ফলে তাদের ওপরও শুল্কের বোঝা বাড়বে।
**ভবিষ্যতের সম্ভাবনা ও বাংলাদেশের বাজার**
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে কোরিয়াকে হয়তো তাদের বাণিজ্য অংশীদারদের দিকে নতুন করে তাকাতে হতে পারে। ক্যালিফোর্নিয়া সান দিয়েগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মুনসেওব লি-র মতে, মার্কিন ভোক্তারা হয়তো এই অতিরিক্ত খরচ বহন করতে রাজি হবেন, কারণ তাদের কাছে বিকল্প খুবই কম।
যদিও কোরিয়ান স্কিনকেয়ার পণ্যগুলো বর্তমানে বাংলাদেশে খুব পরিচিত নয়, তবে বিশ্বজুড়ে এর ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের বাজারেও প্রভাব ফেলতে পারে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতিতে পরিবর্তনের ফলে, এই ধরনের পণ্যের দাম এবং সহজলভ্যতার ওপর প্রভাব পড়তে পারে, যা বাংলাদেশের ভোক্তাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন