মহাকাশে নতুন দিগন্ত: স্পেসএক্সের ফ্রেম২ মিশনে পৃথিবীর দুই মেরুর উপর দিয়ে মানব অভিযান। সম্প্রতি, স্পেসএক্স তাদের ফ্রেম২ মিশনের মাধ্যমে মহাকাশ গবেষণায় এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
এই মিশনে প্রথমবারের মতো মানুষ পৃথিবীর উত্তর এবং দক্ষিণ মেরুর সরাসরি উপর দিয়ে পরিভ্রমণ করেছে। ক্রিপ্টোকারেন্সি বিলিয়নেয়ার, চুং ওয়াংয়ের নেতৃত্বে এই মিশনে অংশ নেন আরও তিনজন: নরওয়ের চলচ্চিত্র পরিচালক জ্যানিক মিক্কেলসেন, জার্মানিতে বসবাসকারী রোবোটিক্স গবেষক রাবিয়া রগ এবং অস্ট্রেলিয়ার অভিযাত্রী এরিক ফিলিপস।
এই মিশনের প্রধান আকর্ষণ ছিল এর বিশেষ কক্ষপথ। সাধারণত, মহাকাশ স্টেশনগুলো নিরক্ষরেখার কাছাকাছি প্রদক্ষিণ করে, কিন্তু ফ্রেম২ মিশনটি পৃথিবীর দুই মেরুর উপর দিয়ে গেছে। এর ফলে নভোচারীরা এক ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে পৃথিবীকে দেখার সুযোগ পেয়েছেন।
মিশনের শুরুতেই নভোচারীদের মধ্যে মহাকাশ ভ্রমণের কারণে সৃষ্ট অসুস্থতা দেখা দেয়। চুং ওয়াং তার সামাজিক মাধ্যমে জানান, যাত্রা শুরুর প্রথম কয়েক ঘণ্টা তাঁদের জন্য খুব একটা আরামদায়ক ছিল না। বমি এবং অসুস্থতার কারণে তাঁরা বেশ কষ্ট পাচ্ছিলেন।
তবে, দ্বিতীয় দিনের সকাল থেকে তাঁরা অনেকটা সুস্থ অনুভব করেন। এই মিশনে নভোচারীরা বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণা চালান।
তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিল মহাকাশ থেকে মেরু অঞ্চলের আলো, “অরোরা”র ছবি তোলা এবং মহাকাশ ভ্রমণের সময় তাঁদের শারীরিক অবস্থার উপর নজর রাখা। এই গবেষণার অংশ হিসেবে, মিক্কেলসেন এবং রগ তাঁদের হরমোনের মাত্রা পরিমাপের জন্য প্রস্রাবের নমুনা পরীক্ষা করেন।
এছাড়াও, তাঁরা ঘুম ও শরীরের অন্যান্য বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণের জন্য বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করেন। ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলে সফলভাবে অবতরণের মাধ্যমে এই মিশন শেষ হয়।
এটি ছিল স্পেসএক্সের ইতিহাসে একটি নতুন মাইলফলক। কারণ, এর আগে কোনো মানব মহাকাশ অভিযান ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলে অবতরণ করেনি। সাধারণত, এই ধরনের মিশন ফ্লোরিডার কাছাকাছি শেষ হয়।
এই মিশনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল মহাকাশে মানুষের জীবনযাত্রা এবং স্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণা করা। ফ্রেম২ মিশনটি প্রমাণ করেছে যে, ভবিষ্যতে মঙ্গল গ্রহে দীর্ঘ সময়ের জন্য মানুষের বসবাসের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও প্রযুক্তি তৈরি করা সম্ভব।
মিশন কমান্ডার চুং ওয়াং জানান, “আমি প্রায়ই বলি ফ্রেম২ হলো একটি স্বালবার্ড মিশন। আমরা সবাই স্বালবার্ডে মিলিত হয়েছিলাম এবং বরফকে ভালোবাসি। এই মিশনটি সেখানেই পরিকল্পনা করা হয়েছিল। আমরা মেরু অঞ্চলে উড়েছি, কারণ আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের মতো কক্ষপথে থাকলে আমরা আমাদের বাসস্থান দেখতে পাই না। এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, মিশনটি তার লক্ষ্য পুরোপুরিভাবে পূরণ করেছে।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের ব্যক্তিগত উদ্যোগে মহাকাশ অভিযানগুলি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর মাধ্যমে মহাকাশ সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান বৃদ্ধি পায় এবং ভবিষ্যতের জন্য নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন