ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে দেশটির হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিককে আটক করা হয়েছে, যাদের মুক্তি অনিশ্চিত। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এবং বিভিন্ন দেশের সরকার মুক্তি প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে চেষ্টা চালালেও, বন্দীদের পরিবারের সদস্যরা চরম উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
সম্প্রতি, আটককৃতদের দুরবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)।
প্রতিবেদন অনুসারে, আটককৃতদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। মেলিতোপোলের বাসিন্দা কোস্তান্তিন জাইনোভকিনকে তার ঘর থেকে তুলে নিয়ে যায় রাশিয়ান নিরাপত্তা বাহিনী।
তার স্ত্রী লিয়ুসিয়েনা জাইনোভকিনার ভাষ্যমতে, সামান্য অপরাধের অভিযোগ তুলে তাকে আটক করা হলেও, পরে তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার মতো গুরুতর অভিযোগ আনা হয়। বর্তমানে তিনি বিচারের অপেক্ষায় রয়েছেন, যেখানে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে।
এই ধরনের ঘটনার শিকার হওয়া মানুষের সংখ্যা কয়েক হাজার। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, আটককৃতদের মধ্যে অনেকেরই কোনো অপরাধের প্রমাণ নেই, আবার অনেককে মাসের পর মাস কোনো অভিযোগ ছাড়াই আটকে রাখা হয়েছে।
আটককৃতদের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগও উঠেছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
মানবাধিকার সংস্থা ‘সেন্টার ফর সিভিল লিবার্টিজ’-এর প্রধান ওলেক্সান্ড্রা মাতভিয়িচুক জানান, তাদের কাছে বেসামরিক নাগরিকদের আটকের বিষয়ে ৪,০০০ এর বেশি সাহায্যের আবেদন এসেছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, যুদ্ধ বন্ধের আলোচনায় আটককৃতদের মুক্তির বিষয়টি সবার আগে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
আটককৃতদের মধ্যে অনেকের পরিবারের সদস্যরা তাদের স্বজনের মুক্তির জন্য আকুল আবেদন জানাচ্ছেন। তাদের একটাই চাওয়া, যেকোনো মূল্যে তাদের প্রিয়জন যেন ঘরে ফিরে আসে। তাদের একজন, মিকিতা স্ক্রিয়াবিনের মা, এখনো জানেন না তার ছেলে কোথায় আছে।
তিনি চান, হয় বন্দী বিনিময় হোক, না হয় তার ছেলেকে দেশে ফেরত পাঠানো হোক।
আরেকজন ভুক্তভোগী হলেন ৬৩ বছর বয়সী সের্হি সিহিফা। তিনি একজন সাংবাদিক ছিলেন এবং রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। তার স্ত্রী ওলেনা জানান, গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে তাকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, রাশিয়ার হাতে আটক হওয়া বেসামরিক নাগরিকদের মুক্তি দেওয়া একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ। কারাগারে বন্দীদের মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। তাদের খাবার ও চিকিৎসা সেবার অভাব রয়েছে।
অনেক ক্ষেত্রে তাদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া বেসামরিক নাগরিকদের ওপর পরিকল্পিতভাবে নির্যাতন চালাচ্ছে। তাদের বন্দী করা হচ্ছে এবং তাদের কাছ থেকে তথ্য আদায়ের জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ রাশিয়াকে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছে। কিন্তু বন্দীদের মুক্তি নিয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট অগ্রগতি দেখা যায়নি। পরিবারগুলো তাদের স্বজনদের ফিরে আসার অপেক্ষায় দিন গুনছে, তবে তাদের মনে শঙ্কাও রয়েছে।
লিয়ুসিয়েনা জাইনোভকিন মনে করেন, আলোচনা সহজ নয়, তবে তিনি ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছেন।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস