জীবন ধারণের জন্য মানুষ নানা ধরনের সংগ্রাম করে থাকে। শহরে বিশেষ করে, যেখানে জায়গার অভাব, সেখানে অনেক মানুষ একসাথে বসবাস করে, এটি একটি সাধারণ চিত্র।
হোস্টেল, মেসে কিংবা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে—এসব ক্ষেত্রে কয়েকজন মানুষের মধ্যে একটি সাধারণ জীবনযাত্রা তৈরি হয়। একসাথে থাকার এই অভিজ্ঞতা সবসময় মসৃণ নাও হতে পারে।
বিভিন্ন মানুষের ভিন্ন রুচি, জীবনযাত্রা এবং মানসিকতার কারণে প্রায়ই কিছু সমস্যা দেখা দেয়, যা আমাদের অনেকের কাছেই পরিচিত।
shared living-এর সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলোর একটি হল ব্যক্তিগত জায়গার অভাব। উদাহরণস্বরূপ, যদি কয়েকজন বন্ধু বা সহকর্মী একটি ফ্ল্যাটে একসাথে থাকে, তাহলে তাদের মধ্যে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।
একজনের ব্যক্তিগত জিনিসপত্র অন্যজন ব্যবহার করতে পারে, যা সম্পর্কের মধ্যে তিক্ততা সৃষ্টি করতে পারে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল পরিচ্ছন্নতা। প্রত্যেকের পরিচ্ছন্নতার ধারণা ভিন্ন হতে পারে।
কেউ হয়তো ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে পছন্দ করে, আবার কারো ক্ষেত্রে তেমনটা দেখা যায় না। ফলে, যিনি পরিচ্ছন্ন থাকতে ভালোবাসেন, তিনি অন্যদের অপরিচ্ছন্নতার কারণে বিরক্ত হতে পারেন।
shared living-এ আরেকটি সাধারণ সমস্যা হল আর্থিক বিষয়। ঘর ভাড়া, বিদ্যুতের বিল, রান্নার খরচ—এসব ভাগাভাগি করে নেওয়ার সময় মতের অমিল হতে পারে।
কে কত টাকা দেবে, সে বিষয়ে স্বচ্ছতা না থাকলে ঝগড়া বাড়ে। এছাড়াও, কারো অতিরিক্ত খরচ করার প্রবণতা অন্যদের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
এছাড়াও, shared living-এ ব্যক্তিগত সম্পর্কের ক্ষেত্রেও কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। একসঙ্গে বসবাস করলে, মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সম্পর্ক তৈরি হয়—বন্ধুত্ব, ভালোবাসার সম্পর্ক, এমনকি শত্রুতাও।
সবার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে অবগত হওয়ার কারণে, কারো ব্যক্তিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ হলে তা মনোমালিন্যের কারণ হতে পারে। গভীর রাতে উচ্চ শব্দে গান শোনা, অতিরিক্ত হৈ-চৈ করা, অথবা বন্ধুদের আনাগোনা—এসব কারণেও অনেক সময় সমস্যা হতে পারে।
এই ধরনের সমস্যাগুলো এড়াতে কিছু বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন। প্রথমত, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে একটি সাধারণ নিয়ম তৈরি করা যেতে পারে।
কে কোন কাজ করবে, সে বিষয়ে একটি তালিকা তৈরি করা যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, আর্থিক বিষয়গুলো নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করা উচিত।
বিল কিভাবে ভাগ করা হবে, সে বিষয়ে আগে থেকেই একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া ভালো। তৃতীয়ত, ব্যক্তিগত সম্পর্কগুলোর ক্ষেত্রে শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।
অন্যের ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। সবার প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া এবং একসঙ্গে মিলেমিশে থাকার মানসিকতা তৈরি করা গেলে shared living-এর অভিজ্ঞতা আরও সুন্দর হতে পারে।
জীবন একটি চলমান প্রক্রিয়া, যেখানে মানুষ অনেক কিছুই শেখে। shared living-এর অভিজ্ঞতা আমাদের ধৈর্যশীল হতে, অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে এবং বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে মানিয়ে চলতে শেখায়।
সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে, আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে তা সমাধান করা গেলে shared living একটি সুন্দর এবং মূল্যবান অভিজ্ঞতা হতে পারে।
তথ্য সূত্র: The Guardian