বাংলার প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য এক নতুন গন্তব্য: লেক ডিস্ট্রিক্টে ওয়ার্ডসওয়ার্থ ওয়ে।
ইংল্যান্ডের লেক ডিস্ট্রিক্ট, যা তার মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য সুপরিচিত, সেখানে সম্প্রতি উদ্বোধন করা হয়েছে “ওয়ার্ডসওয়ার্থ ওয়ে”। এই নতুন পদযাত্রা পথটি তৈরি করা হয়েছে বিখ্যাত ইংরেজি কবি উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থের জীবন ও সাহিত্যকর্মকে উৎসর্গ করে।
১৪ মাইল (প্রায় ২২.৫ কিলোমিটার) দীর্ঘ এই পথটি পর্যটকদের নিয়ে যাবে ওয়ার্ডসওয়ার্থের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলোতে, যা প্রকৃতির মাঝে কবির অনুভূতিকে উপলব্ধি করতে সাহায্য করবে।
কবি ওয়ার্ডসওয়ার্থ এবং তার সহযোগী স্যামুয়েল টেইলর কোলরিজ ও রবার্ট সাউদিকে একত্রে “লেক পোয়েটস” বা ‘হ্রদের কবি’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। লেক ডিস্ট্রিক্টের শান্ত হ্রদ এবং উঁচু পাহাড়ের দৃশ্য তাদের কাব্যচর্চায় গভীর প্রভাব ফেলেছিল।
নতুন এই পথ, ওয়ার্ডসওয়ার্থের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ৭ই এপ্রিল উন্মোচন করা হয়।
ওয়ার্ডসওয়ার্থ ওয়ে-এর যাত্রা শুরু হয়েছে আলসওয়াটার লেকের তীর থেকে, যা অ্যাম্বেলসাইড শহরের দিকে গেছে। পথটি তৈরি করতে বিদ্যমান কিছু পুরোনো পথকে একত্রিত করা হয়েছে।
এই পথের পরিকল্পনা করেছেন গর্ডন লাইটবার্ন, যিনি ‘ফ্রেন্ডস অফ দ্য আলসওয়াটার ওয়ে’র প্রধান। তিনি এই স্থানটিকে রোমান্টিক সাহিত্য আন্দোলনের ‘cradle’ বা ‘উৎপত্তিস্থল’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
এই পথে হেঁটে যাওয়া মানুষেরা ওয়ার্ডসওয়ার্থের “plain living and high thinking” বা “সরল জীবন এবং উন্নত চিন্তা”-এর ধারণাটির সাথে পরিচিত হতে পারবে।
এই পথ পরিক্রমা একদিকে যেমন গ্রিসডেল টার্নের আশেপাশে কঠিন পথ ধরে হেঁটে যাওয়ার সুযোগ করে দেবে, তেমনই গ্রাসমেয়ার গ্রামের শান্ত পরিবেশে হেঁটে কবির জীবন ও প্রভাব সম্পর্কে ধারণা দেবে।
পর্যটকেরা এই পথে ওয়ার্ডসওয়ার্থের সময়ের চিত্রকর্ম ও স্কেচগুলো দেখতে পাবেন, যা সেই সময়ের প্রকৃতির চিত্র ফুটিয়ে তোলে।
পথে গ্রাসমেয়ারের ঐতিহ্যবাহী জিঞ্জারব্রেড-এর স্বাদ নেওয়া যেতে পারে, যা ভ্রমণকে আরও আনন্দদায়ক করে তুলবে।
পথটির প্রথম অংশ, প্রায় ৮.৩ মাইল (১৩.৪ কিলোমিটার), গ্লেনরিডিং গ্রাম থেকে শুরু হয়ে গ্রিসডেল টার্ন এবং হেলভেলিনের পাথুরে দিগন্তের দিকে গেছে।
এই অংশে ওয়ার্ডসওয়ার্থের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যেমন ‘ব্রাদার্স পারটিং স্টোন’, যেখানে কবি, তার বোন ডরোথি এবং ভাই জন-এর বিদায়ের স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে।
দ্বিতীয় অংশে, পর্যটকেরা ওয়ার্ডসওয়ার্থের পরিবার যেখানে ১৫ বছর ধরে বসবাস করতেন, সেই গ্রাসমেয়ারে যাত্রা শুরু করেন।
এখানে সেন্ট ওসওয়াল্ডের চার্চে কবির সমাধিস্থলে কিছুক্ষণ কাটানো যেতে পারে।
এই পথের তৃতীয় অংশে রয়েছে ডোভ কটেজ, যেখানে ওয়ার্ডসওয়ার্থ তার বোন ডরোথির সাথে বসবাস করতেন। কটেজের বাগানটি কবির দৈনন্দিন জীবনের প্রতিচ্ছবি বহন করে।
চতুর্থ অংশে, এই পথ ওয়ার্ডসওয়ার্থের সাহিত্যকর্মের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করে।
এখানে টমাস ডি কুইন্সি এবং হ্যারিয়েট মার্টিনোর মতো সাহিত্যিকদের বাসস্থানগুলো দেখা যায়।
পথটি অ্যাম্বেলসাইডে শেষ হয়, যেখানে ডরোথি হ্যারিসনের বাসভবন ছিল এবং বর্তমানে এটি ইউনিভার্সিটি অফ ক্যামব্রিয়ার অংশ।
ওয়ার্ডসওয়ার্থের বোন ডরোথি, যিনি ছিলেন একজন লেখিকা, তার লেখাগুলো এই পথের গাইডবুকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
গাইডবুকটি লেখিকা জেড কুকসন তৈরি করেছেন।
এই পথটি শুধু একটি ভ্রমণের সুযোগ নয়, বরং প্রকৃতির কাছাকাছি এসে ওয়ার্ডসওয়ার্থের দর্শন ও সাহিত্যের গভীরতা অনুভব করারও একটি মাধ্যম।
প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা ও সাহিত্যচর্চার এই মেলবন্ধন, ভ্রমণকারীদের জন্য একটি অনন্য অভিজ্ঞতা হতে পারে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান