আফ্রিকার বুকে, কেনিয়ার একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে, গণ্ডারদের বাঁচানোর এক অদম্য প্রচেষ্টা চলছে। নাম তার সেরা গণ্ডার অভয়ারণ্য (Sera Rhino Sanctuary)। যেখানে পর্যটকদের জন্য পায়ে হেঁটে গণ্ডার দেখার এক বিরল সুযোগ রয়েছে।
এই অভয়ারণ্যটি শুধু গণ্ডারদের আশ্রয়স্থলই নয়, স্থানীয় সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, এখানে সাদা ও কালো উভয় প্রজাতির গণ্ডারদের সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
গণ্ডার, যারা পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলচর প্রাণী (আফ্রিকার হাতিদের পরেই), আজ বিলুপ্তির পথে। চোরা শিকারিদের দৌরাত্ম্যে তাদের সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রুগার ন্যাশনাল পার্কে শুধু ২০২৩ সালেই ৩৫টি গণ্ডার শিকার হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে, কেনিয়ার সেরা গণ্ডার অভয়ারণ্য এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এখানে, চোরা শিকারিদের দৌরাত্ম্য শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
সেরা অভয়ারণ্যের প্রধান আকর্ষণ হল পায়ে হেঁটে গণ্ডার দেখা। পর্যটকদের গাইড করেন স্থানীয় সাম্বুরু সম্প্রদায়ের অভিজ্ঞ গাইডরা। তারা গণ্ডারদের আচরণ সম্পর্কে গভীর জ্ঞান রাখেন এবং তাদের কাছাকাছি যাওয়া ও তাদের ছবি তোলার সুযোগ করে দেন।
গাইডরা বাতাসের গতিবিধি ও গন্ধের মাধ্যমে গণ্ডারদের অবস্থান নির্ণয় করেন, যা তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।
২০১৫ সাল থেকে, সেরা অভয়ারণ্যে কালো গণ্ডারদের পুনরায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে। আগে ১৯৮০-এর দশকে এই অঞ্চলে এদের দেখা পাওয়া যেত না। এরপর, গত বছর (ফেব্রুয়ারি, ২০২৪) এখানে চারটি সাদা গণ্ডার আনা হয়।
বর্তমানে, এখানে ২২টি কালো এবং ৫টি সাদা গণ্ডার রয়েছে।
এই অভয়ারণ্যের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি হল স্থানীয় সম্প্রদায়ের সক্রিয় অংশগ্রহণ। সেরা অভয়ারণ্যের সমস্ত কর্মী এবং রেঞ্জার স্থানীয় এবং তারা এই অঞ্চলের পরিবেশ ও বন্যপ্রাণীর সঙ্গে পরিচিত।
স্থানীয় সম্প্রদায়ের সদস্যরা মনে করেন, এই অভয়ারণ্য তাদের সম্পদ এবং এর মাধ্যমে তারা সরাসরি উপকৃত হচ্ছেন। পর্যটন থেকে অর্জিত অর্থ স্থানীয় স্কুল, স্বাস্থ্যসেবা এবং অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় করা হয়।
এর ফলে, স্থানীয় মানুষের মধ্যে এই সংরক্ষণের প্রতি আগ্রহ ও সমর্থন তৈরি হয়েছে।
সেরা গণ্ডার অভয়ারণ্যে ভ্রমণের সেরা সময় হল শুষ্ক মৌসুমে (জুন থেকে অক্টোবর এবং ডিসেম্বর থেকে মার্চ)। এই সময়ে, গণ্ডারদের দেখা সহজ হয়।
এখানে থাকার জন্য সারুনি রাইনো (Saruni Rhino) নামক একটি ছোট লজ রয়েছে, যা স্থানীয় সম্প্রদায়ের মালিকানাধীন। পর্যটকদের জন্য এখানে চারটি কুটির (bandas) রয়েছে।
এখানকার কর্মীদের সবাই স্থানীয় এবং লজের মুনাফা স্থানীয় উন্নয়নে ব্যয় করা হয়।
গণ্ডার সংরক্ষণে সেরা অভয়ারণ্যের এই উদ্যোগ আফ্রিকার অন্যান্য অঞ্চলের জন্য একটি মডেল হতে পারে। কারণ, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন – এই দুটি বিষয়কে একত্রিত করে তারা এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
এটি প্রমাণ করে, স্থানীয় মানুষের অংশগ্রহণ এবং সচেতনতা বাড়িয়ে বন্যপ্রাণীদের রক্ষা করা সম্ভব।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক