যুক্তরাজ্যে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে এক নারী, গ্রেস ডেভিডসন, তার বোনের কাছ থেকে জরায়ু প্রতিস্থাপনের পর সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। এই ঘটনাটি শুধু চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক উজ্জ্বল দিক উন্মোচন করেনি, বরং বন্ধ্যাত্বে আক্রান্ত নারীদের জন্য নতুন আশা জাগিয়েছে।
ডেভিডসন-দম্পতি তাদের নবজাতকের নাম রেখেছেন অ্যামি ইসাবেল, যা গ্রেসের বোন এবং জরায়ু-দাতা অ্যামি পার্ডি এবং অস্ত্রোপচারকারী সার্জন ইসাবেল কুইরোগার প্রতি উৎসর্গীকৃত।
ছেচল্লিশ বছর বয়সী গ্রেস ডেভিডসন, যিনি একটি বিরল রোগে (Mayer-Rokitansky-Küster-Hauser syndrome) আক্রান্ত ছিলেন, যার কারণে তার জরায়ু ছিল না। তিনি ও তার স্বামী, সাঁত্রিশ বছর বয়সী অ্যাঙ্গাস ডেভিডসন, সন্তানের মুখ দেখার স্বপ্ন দেখতেন।
অবশেষে, তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। তাঁদের এই আনন্দের কারণ ছিল গ্রেসের বোন, অ্যামি পার্ডি। যিনি নিজের জরায়ু দান করে বোনকে মাতৃত্বের স্বাদ পেতে সাহায্য করেছেন।
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে আট ঘণ্টার এক জটিল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এই প্রতিস্থাপন সম্পন্ন হয়। এরপর, চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে থাকা ডেভিডসন দম্পতি সফলভাবে তাদের প্রথম সন্তানের জন্ম দেন।
লন্ডনের কুইন শার্লটস অ্যান্ড চেলসি হাসপাতালে গত ২৭শে ফেব্রুয়ারি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অ্যামি ইসাবেলের জন্ম হয়।
এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে দীর্ঘ ২৫ বছরের গবেষণা। অধ্যাপক রিচার্ড স্মিথ, যিনি এই প্রকল্পের ক্লিনিক্যাল লিড ছিলেন, তিনি বলেন, “আমি খুবই আনন্দিত। ২৫ বছর ধরে এই গবেষণা করার পর, অবশেষে আমরা ছোট্ট অ্যামি ইসাবেলকে পেলাম। এটা সত্যিই অসাধারণ।”
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এই সাফল্যের ফলে জরায়ুহীন বা ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের মাতৃত্বের নতুন দিগন্ত উন্মোচন হয়েছে। যুক্তরাজ্যে আরও তিনটি জরায়ু প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, যেখানে মৃত ডোনারদের অঙ্গ ব্যবহার করা হয়েছে।
চিকিৎসকরা আশা করছেন, এই নারীরাও ভবিষ্যতে মা হতে পারবেন। বর্তমানে, আরও দশজন নারী এই ধরনের প্রতিস্থাপনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যার প্রতিটির খরচ প্রায় ২৫,০০০ পাউন্ড।
অ্যামি পার্ডি, যিনি তার বোনের জন্য এই ত্যাগ স্বীকার করেছেন, বলেছেন, “আমার বোন ও দুলাভাইকে বাবা-মা হিসেবে দেখাটা ছিল আমার জন্য সবচেয়ে আনন্দের এবং এর জন্য আমি সবকিছু করতে রাজি ছিলাম।”
ডেভিডসন জানান, গর্ভধারণের সময় তিনি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর ওষুধ সেবন করেছেন, যাতে তার শরীর বোনের জরায়ুকে প্রত্যাখ্যান না করে।
বিশ্বজুড়ে এ পর্যন্ত একশটির বেশি জরায়ু প্রতিস্থাপন করা হয়েছে এবং এর ফলে অন্তত ৫০ জন শিশুর জন্ম হয়েছে। ২০১৬ সালে সুইডেনে প্রথম সফলভাবে জরায়ু প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে এক শিশুর জন্ম হয়।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান