মাটির কাছাকাছি: প্রকৃতির শিক্ষিকা, পপি ওকোচা।
প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক বহু পুরনো। প্রকৃতির সান্নিধ্যে এসে মানুষ যেমন খুঁজে পায় শান্তি, তেমনই প্রকৃতির কাছ থেকে শিখে নেয় জীবনধারণের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পাঠ।
এমনি একজন মানুষ হলেন ডেভন-এর বাসিন্দা পপি ওকোচা। পেশায় তিনি একজন বাস্তুসংস্থান বিষয়ক বাগিচা-তত্ত্ববিদ এবং লেখিকা।
সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে তাঁর নতুন বই, ‘এ ওয়াইল্ডার ওয়ে: হাউ গার্ডেনস গ্রো আস’। বইটিতে তিনি প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের আত্মিক সংযোগের কথা তুলে ধরেছেন।
পপির বেড়ে ওঠা নাইজেরিয়ান বাবা এবং শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশ মায়ের তত্ত্বাবধানে, ইংল্যান্ডের গ্রামীণ পরিবেশে। শৈশবে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকাতেও কিছু বছর কাটিয়েছেন।
তাঁর কথায়, ছোটবেলার স্মৃতিগুলো ছিল বাগানময়। উইল্টশায়ারের এক বাগান, যেখানে তাঁর ঠাকুরমা বিভিন্ন ধরনের ফুল ও ফলের গাছ লাগাতেন, তাঁর কাছে ছিল এক জাদুকরী জগৎ।
জোহানেসবার্গের বাগানগুলোতে ছিল মিষ্টি ফল আর সূর্যের আলো। এছাড়া, বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর তাঁর মা’র তত্ত্বাবধানে থাকা কিছু বন্য বাগানও তাঁর শৈশবের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল।
দক্ষিণ আফ্রিকায় একটি স্টেইনার স্কুলে পড়ার সময় তিনি কম্পোস্ট তৈরি করা এবং ধুলো-মাটিতে খেলাধুলো করার সুযোগ পান, যা ব্রিটেনের মূলধারার শিক্ষা থেকে ছিল বেশ ভিন্ন।
পপির মায়ের বাগান করার আগ্রহ তাঁকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। তিনি দেখেছেন, কীভাবে বাগান তৈরি করার এই প্রচেষ্টা তাঁর মাকে বিচ্ছেদের কষ্ট থেকে মুক্তি দিয়েছে।
তাঁর ভাষায়, “ফুলের প্রতি মায়ের ভালোবাসা এবং ফুলের ভালোবাসার প্রতিদান দেখাটা ছিল এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।”
পপির মতে, বাগান আমাদের এক ধরনের গুরু। বাগান আমাদের অনেক কিছুই শেখায়, যার মধ্যে অন্যতম হল— প্রকৃতির পরিবর্তনশীলতা।
তিনি মনে করেন, “একটা সুন্দর শুরুর জন্য প্রয়োজন একটা সুন্দর সমাপ্তি।” তাঁর এই উপলব্ধি, বাগান এবং মানুষের জীবনের মধ্যেকার সম্পর্ককে নতুনভাবে তুলে ধরে।
ছোটবেলা থেকেই পপির স্বপ্ন ছিল দক্ষিণ আফ্রিকায় ফিরে যাওয়া। মডেলিংয়ের কাজ করে তিনি কিছু টাকা জমিয়েছিলেন, যাতে স্কুল শেষ করার পর সেখানে যেতে পারেন।
মডেলিংয়ের কারণে তিনি পরিচিতি পেলেও, ফ্যাশন জগতের সঙ্গে তাঁর একটা দূরত্ব তৈরি হয়। তিনি বুঝতে পারেন, কীভাবে এই জগৎটা মানুষকে শোষণ করে।
তাঁর মনে হয়েছিল, “আমি যে পোশাক পরে ছবি তুলছি, তার পেছনে একজন কৃষ্ণাঙ্গ নারীর শ্রম রয়েছে।”
এরপর তিনি স্বাস্থ্য এবং প্রকৃতির কাছাকাছি আসার জন্য বাগান করা শুরু করেন। লন্ডনের একটি হাউসবোটে থাকাকালীন তিনি প্রথম একটি আদা গাছ লাগান।
এরপর ধীরে ধীরে বাগান করা তাঁর জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে। তাঁর বাগানে ফল ও সবজির পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ভেষজ গাছও রয়েছে।
পপির মতে, আমাদের সবারই প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ রাখা উচিত। তাঁর নতুন বই ‘এ ওয়াইল্ডার ওয়ে’-তে তিনি বাগানকে আরও ভালোভাবে প্রকৃতির সঙ্গে মেলানোর কিছু উপায় বাতলেছেন।
পপির এই জীবনযাত্রা বুঝিয়ে দেয়, প্রকৃতি আমাদের শিক্ষক এবং আশ্রয়দাতা। প্রকৃতির কাছাকাছি থাকলে আমরা নিজেদের আরও ভালোভাবে বুঝতে পারি, যা আমাদের সুস্থ ও সুখী জীবন ধারণে সাহায্য করে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান