মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতি নিয়ে সিনেটরদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেওয়া বাণিজ্য শুল্কের সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন তারা।
এর ফলে বাজারের অস্থিরতা এবং সম্ভাব্য অর্থনৈতিক মন্দার ঝুঁকি বাড়ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি জ্যামিসন গ্রিয়ারকে সিনেট ফিনান্স কমিটির শুনানিতে এই বিষয়ে জবাবদিহি করতে হয়। রিপাবলিকান সিনেটর থম টিলিস সরাসরি অভিযোগ করে বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন যেন এক প্রকার বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছে।
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যদি এই শুল্কের কারণে মার্কিন নাগরিকদের বেশি দামে জিনিস কিনতে হয় এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যায়, তাহলে এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের তিনি খুঁজে বের করবেন।
সিনেটরদের এই উদ্বেগের কারণ হলো, গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পর বিশ্ববাজারে বড় ধরনের দরপতন হয়। যদিও মঙ্গলবার বাজারে কিছুটা স্থিতিশীলতা ফিরে আসে, কারণ অনেকেই আশা করছেন আলোচনা এবং সমঝোতার মাধ্যমে হয়তো এই শুল্ক কমানো বা স্থগিত করা হতে পারে।
শুনানিতে সিনেটররা জানতে চান, এই শুল্ক আরোপের মূল উদ্দেশ্য কী? বিভিন্ন সময়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, এর মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ানো, উৎপাদন খাতকে দেশে ফিরিয়ে আনা, অভ্যন্তরীণ শিল্পখাতকে সুরক্ষা দেওয়া এবং অন্যান্য দেশকে ছাড় দিতে বাধ্য করা সম্ভব হবে।
তবে ডেমোক্রেট সিনেটর রন উইডেন জানতে চান, এই শুল্ক নীতি বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট পরিকল্পনা কী? কারণ, গত কয়েক সপ্তাহে শুল্কের বিষয়ে হোয়াইট হাউজের বক্তব্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম শোনা গেছে।
রিপাবলিকান সিনেটর চাক গ্রাসলি জানিয়েছেন, যদি এই শুল্কের মূল উদ্দেশ্য হয় শুধু সরকারের রাজস্ব বাড়ানো, তাহলে তিনি এর বিরোধিতা করবেন। কারণ, এর ফলে বিদেশি বাজারে মার্কিন পণ্যের প্রবেশাধিকার বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
মার্কিন সংবিধানে শুল্ক নির্ধারণের ক্ষমতা কংগ্রেসের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এই ক্ষমতা ধীরে ধীরে শ্বেত হাউজের দিকে চলে গেছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই ক্ষমতা ব্যবহার করে বাণিজ্যনীতি বাস্তবায়নে বিশেষভাবে আগ্রাসী ভূমিকা পালন করছেন। তিনি জরুরি ক্ষমতা প্রয়োগ করে গত সপ্তাহে বিশাল শুল্ক আরোপ করেন। এর আগে চীন, কানাডা এবং মেক্সিকো থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপরও তিনি একই ক্ষমতা ব্যবহার করেছিলেন।
বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সিনেটর উইডেন বলেছেন, “ট্রাম্পের এলোমেলো এবং বিশৃঙ্খল শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যখাতে কংগ্রেস তার সাংবিধানিক ক্ষমতা থেকে অনেকখানি দূরে সরে এসেছে।
এখন সময় এসেছে সেই ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের।
সিনেটর গ্রাসলি এবং ডেমোক্রেট সিনেটর মারিয়া কান্তওয়েল একটি বিল উত্থাপন করেছেন, যেখানে নতুন শুল্ক আরোপের আগে প্রেসিডেন্টকে কংগ্রেসের অনুমোদন নিতে হবে।
সিনেটরদের অনুমোদন পাওয়ার জন্য ৬০ দিন সময় পাবেন প্রেসিডেন্ট। অন্যথায়, শুল্ক বাতিল হয়ে যাবে।
তবে সিনেট মেজরিটি লিডার জন থুন এই বিলের পক্ষে সমর্থন দেওয়ার কোনো ইঙ্গিত দেননি। তিনি বলেছেন, গ্রাসলি ও কান্তওয়েলের এই বিলের ভবিষ্যৎ নেই।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অর্থনীতি, বাণিজ্য সম্পর্ক এবং সম্ভাব্য প্রভাবগুলোও বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে।
বিশ্ব বাণিজ্য অস্থিরতার কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি বাজারে এবং দেশের ভোক্তাদের ওপর এর প্রভাব পড়তে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, যদি যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করে, তবে তা দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এছাড়া, বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বাড়লে, তা সরাসরি বাংলাদেশের বাজারেও অনুভূত হবে।
তথ্যসূত্র: এ্যাসোসিয়েটেড প্রেস