আজকাল রূপচর্চার প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে, বিশেষ করে ঘরে বসে রূপচর্চা করার প্রবণতা বাড়ছে উল্লেখযোগ্যভাবে। কোভিড পরিস্থিতি মানুষকে ঘরবন্দী করে রাখলেও, এর ফলস্বরূপ সৌন্দর্যচর্চার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।
বাজারেও এসেছে নানা ধরনের রূপচর্চার সরঞ্জাম এবং প্রসাধনী। তবে, সব ধরনের বিউটি ট্রিটমেন্ট কি ঘরে বসে করা নিরাপদ? কোনগুলো ঘরে করা যেতে পারে, আর কোনগুলোর জন্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি?
আসুন, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বিশেষজ্ঞদের মতামত ও পরামর্শের ভিত্তিতে, ঘরোয়া রূপচর্চা নিয়ে কিছু জরুরি বিষয় জেনে নেওয়া যাক।
আলোচনা শুরু করার আগে, একটি বিষয় পরিষ্কার করা দরকার। ত্বক ও শরীরের সৌন্দর্য একটি অত্যন্ত ব্যক্তিগত বিষয়।
এখানে সবার ত্বক এবং শরীরের ধরন আলাদা। তাই, কোনো একটি চিকিৎসা সবার জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে।
**ঘরে বসে চেষ্টা করতে পারেন:**
- **লাইট থেরাপি ফেসিয়াল:** এলইডি (LED) মাস্ক ব্যবহার করে লাইট থেরাপি ফেসিয়াল করা এখন বেশ জনপ্রিয়। এটি ত্বকের পুনরুজ্জীবনে সাহায্য করে, কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায় এবং প্রদাহ কমায়। তবে, মাস্ক কেনার সময় নিশ্চিত করুন সেটি নিরাপত্তা-পরীক্ষিত এবং ভালো মানের।
- **গua sha (গুয়াশা):** ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসা পদ্ধতি হলো গুয়াশা। এই পদ্ধতিতে একটি মসৃণ পাথরের (সাধারণত জেড) সাহায্যে ত্বকের ওপর ঘষা হয়, যা রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, লসিকাতন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং পেশী শিথিল করে। ঘরে বসে এটি করার সময় সঠিক নিয়ম অনুসরণ করা জরুরি। হালকা চাপ দিয়ে, ত্বকে তেল ব্যবহার করে এটি করতে হয়।
- **ইএমএস (EMS) ফেসিয়াল:** এই পদ্ধতিতে বৈদ্যুতিক তরঙ্গ ব্যবহার করে মুখের পেশীগুলোকে সক্রিয় করা হয়, যা ত্বককে টানটান করতে সাহায্য করে। যদিও এটি সেলুনে বেশি প্রচলিত, তবে ঘরে ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত ডিভাইস পাওয়া যায়। তবে, ব্যবহারের সঠিক নিয়ম এবং ফ্রিকোয়েন্সি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকতে হবে।
- **হেয়ার গ্লসিং:** চুলের উজ্জ্বলতা বাড়াতে হেয়ার গ্লসিং একটি ভালো উপায়। তবে, কালারযুক্ত গ্লস ব্যবহার না করাই ভালো। কালারবিহীন গ্লস ব্যবহার করে চুলের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনা যেতে পারে।
**সাবধানতা অবলম্বন করুন:**
- **দাঁত সাদা করা (Teeth whitening):** ঘরে বসে দাঁত সাদা করার কিট ব্যবহার করলে অনেক সময় কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায় না। কারণ, বাজারে উপলব্ধ পণ্যগুলোতে হাইড্রোজেন পারক্সাইডের পরিমাণ সীমিত থাকে, যা দাঁত সাদা করার জন্য যথেষ্ট নয়। তাছাড়াও, এর ফলে দাঁতের এনামেলের ক্ষতি হতে পারে এবং মাড়িতে প্রদাহ দেখা দিতে পারে।
- **সেলফ-ট্যানিং:** সেলফ-ট্যানিংয়ের ক্ষেত্রে ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া ভালো। ঘরে বসে এই কাজটি করলে অনেক সময় ত্বকের বিভিন্ন স্থানে ছোপ ছোপ দাগ হতে পারে।
**বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়াই ভালো:**
- **মাইক্রোনিডলিং:** মাইক্রোনিডলিংয়ে ত্বকে সূক্ষ্ম ছিদ্র করা হয়, যা কোলাজেন উৎপাদনে সাহায্য করে। তবে, এটি ঘরে করা ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, স্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং সঠিক কৌশল জানা না থাকলে, ত্বকে সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- **ল্যাশ লিফট ও ব্রাউ লেমিনেশন:** ল্যাশ লিফট এবং ব্রাউ লেমিনেশন-এর মতো চিকিৎসাগুলো সাধারণত সেলুনে করানোই ভালো। কারণ, এখানে চোখের খুব কাছাকাছি রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয়, যা সামান্য ভুলের কারণে চোখের ক্ষতি করতে পারে।
- **জেল ম্যানিকিউর ও পেডিকিউর:** ঘরে বসে জেল ম্যানিকিউর করার অনেক সরঞ্জাম পাওয়া যায়, তবে এটি করার জন্য প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। ভুলভাবে করলে নখের ক্ষতি হতে পারে।
সবশেষে, সৌন্দর্যচর্চা একটি অত্যন্ত ব্যক্তিগত বিষয়। নিজের ত্বকের ধরন বুঝে, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক চিকিৎসা নেওয়া উচিত।
ঘরে বসে রূপচর্চা করার সময়, নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যবিধি সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। কোনো বিষয়ে সন্দেহ হলে, অবশ্যই অভিজ্ঞ কারো পরামর্শ নিন।
তথ্য সূত্র: The Guardian