শিরোনাম: বিলাসবহুল খাদ্য সামগ্রী চুরি: যুক্তরাজ্যে প্রতারণার নতুন কৌশল, বাংলাদেশের জন্য সতর্কবার্তা
খাদ্যপণ্যের দাম ক্রমাগত বাড়তে থাকায়, উন্নত বিশ্বে খাদ্যপণ্যের নিরাপত্তা এক গুরুতর উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে ঘটেছে এমন কিছু ঘটনা, যা আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার ধারণাটিকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে।
সেখানকার বাজারে নামী-দামি খাদ্যপণ্য, যেমন – বিশেষ ধরনের চিজ, স্মোকড স্যামন, জলপাই তেল – ইত্যাদি চুরির ঘটনা বাড়ছে, যা প্রতারণার এক নতুন রূপ উন্মোচন করেছে। এই ধরনের ঘটনাগুলো শুধু ব্যবসায়ীদের ক্ষতি করছে না, বরং খাদ্য সরবরাহ শৃঙ্খলে বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে।
যুক্তরাজ্যের খাদ্য উৎপাদনকারীরা এখন এক অভিনব প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। প্রতারকরা প্রথমে একটি ভুয়া পরিচয় তৈরি করে, যেন তারা কোনো বড় বাজারের প্রতিনিধি। এরপর তারা উৎপাদকদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণে খাদ্যপণ্য অর্ডার করে, যার মূল্য কয়েক হাজার পাউন্ড পর্যন্ত হতে পারে।
পণ্যের চালান আসার পর তারা আর তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না, ফলে ব্যবসায়ীরা তাদের জিনিস এবং অর্থ দুটোই হারান।
এমনই এক ঘটনার শিকার হয়েছিলেন ক্রিস সোয়েলস নামের একজন ব্যবসায়ী। তিনি স্মোকড স্যামন উৎপাদন করেন। একটি ভুয়া ইমেলের মাধ্যমে তার সাথে যোগাযোগ করা হয় এবং একটি ফরাসি সুপার মার্কেটের জন্য বড় অর্ডারের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
প্রথম দিকে সবকিছু স্বাভাবিকভাবে চললেও, পেমেন্টের সময় গড়িমসি শুরু হয়। পরে তিনি জানতে পারেন, তিনি আসলে প্রতারিত হয়েছেন এবং তার প্রায় ৪০ হাজার পাউন্ড মূল্যের পণ্য চুরি হয়ে গেছে।
শুধু স্যামন নয়, এই প্রতারণার শিকার হয়েছে যুক্তরাজ্যের নামকরা চিজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ‘নীলস ইয়ার্ড ডেইরি’ও। তাদের কাছ থেকে প্রায় ৩ লক্ষ পাউন্ডের চিজ হাতিয়ে নেওয়া হয়। প্রতারকরা এতটাই চালাক ছিল যে তারা পণ্যের গুণগত মান সম্পর্কেও ভালোভাবে জানত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি, ইউক্রেন যুদ্ধ এবং জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যাওয়াই এই ধরনের অপরাধ বাড়ার মূল কারণ। এর সাথে যুক্ত হয়েছে ব্রেক্সিট-পরবর্তী সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে যুক্তরাজ্যের দুর্বল যোগাযোগ এবং খাদ্য অপরাধকে হালকাভাবে দেখার প্রবণতা।
এই ধরনের অপরাধ দমনে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অনেক ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছেন, তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ সেভাবে ব্যবস্থা নেয়নি। তবে, কিছু ক্ষেত্রে প্রতারকদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে।
খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, খাদ্য ব্যবসার সাথে জড়িত সকলকে এখন অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে। সরবরাহকারীদের সম্পর্কে ভালোভাবে খোঁজখবর রাখতে হবে এবং ক্রেতাদের বিশ্বাস করার আগে তাদের পরিচয় যাচাই করতে হবে।
এছাড়াও, এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বাড়ানো এবং কঠোর আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি আমরা বিষয়টি বিবেচনা করি, তাহলে দেখতে পাই, এখানেও ভেজাল খাদ্য এবং খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ে প্রায়ই অভিযোগ শোনা যায়। তাই, যুক্তরাজ্যের ঘটনাগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে, আমাদের দেশেও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরও বেশি সচেতন হতে হবে।
ভেজাল প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া, খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহের প্রতিটি স্তরে স্বচ্ছতা আনা এবং ভোক্তাদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা জরুরি।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান