শিরোনাম: ভালোবাসার এক ভিন্ন গল্প: সংস্কৃতি ও সমাজের বাধা পেরিয়ে
আয়ারল্যান্ডের এক ক্যাথলিক পরিবার থেকে আসা ইওন, যিনি পেশায় হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ। আর সিডনিতে বসবাস করা মিচ, যিনি এইচআইভি নিয়ে গবেষণা করেন। তাদের ভালোবাসার গল্পটি যেন সমাজের প্রচলিত ধারণাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এগিয়ে চলে।
২০০০ সালের শুরুর দিকে, ইওন যখন নিজের পরিচয় নিয়ে দ্বিধায় ছিলেন, তখন আয়ারল্যান্ডে সমকামিতা নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা হতো না। রক্ষণশীল সমাজে বেড়ে ওঠা ইওন একসময় দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। এরপর তিনি কাজের সূত্রে পাড়ি জমান সিডনিতে।
সেখানেকার একটি মার্ডি গ্রা উৎসবে মিচের সঙ্গে তার প্রথম দেখা হয়। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।
একদিন মিচের একটি পুরোনো গাড়িতে করে ডেটে যাওয়ার সময়, ইওন গাড়ির সিটের নিচে কিছু গানের খাতা দেখতে পান। কৌতূহল নিয়ে তিনি মিচকে জিজ্ঞেস করেন, “তুমি কি কোনো বাদ্যযন্ত্র বাজাও?” মিচ বিষয়টি এড়িয়ে যান, শুধু বলেন, “কখনো কখনো পিয়ানো বাজাই।”
কিন্তু এর এক বছর পর মিচের ৩০তম জন্মদিনের এক অনুষ্ঠানে আসল ঘটনা প্রকাশ হয়। বন্ধুদের অনুরোধে মিচ যখন পিয়ানোতে বসে, তখন সবাই অবাক হয়ে যায়।
কারণ, তিনি এত সুন্দরভাবে একটি গানের সূচনা বাজিয়েছিলেন, যা আগে কেউ শোনেনি। সেই রাতে মিচ তার ভেতরের শিল্পীসত্তাকে যেন সবার সামনে উন্মোচন করেন।
ইওন মুগ্ধ হয়ে অনুভব করেন, এই মানুষটির সঙ্গেই তিনি সারা জীবন কাটাতে চান।
ইওন বলেন, “সমকামী হিসেবে বেড়ে ওঠার কারণে, আমরা অনেক কিছুই লুকিয়ে রাখতে শিখে যাই। মিচও হয়তো তেমনটা করতেন।”
সমকামীদের অধিকারের জন্য সিডনিতে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। এরপর ২০১৫ সালে আয়ারল্যান্ডে যখন সমকামীদের বিবাহকে স্বীকৃতি দেওয়া হলো, তখন তাদের জীবনে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়।
তারা তাদের ভালোবাসার উদযাপন করার সিদ্ধান্ত নেন।
ইওনের জন্মস্থান, আয়ারল্যান্ডের ক্যাশেলে, তারা বিয়ের আয়োজন করেন।
বিয়ের অনুষ্ঠানে স্থানীয় মানুষেরা তাদের সাদরে গ্রহণ করে। এমনকি শহরের একটি বিখ্যাত পাথরের ওপর, যা একসময় সেল্টিক রাজাদের আসন ছিল, সেটিকে রাতের বেলা উজ্জ্বল গোলাপি আলোয় সাজানো হয়।
তাদের ভালোবাসার প্রতি সম্মান জানিয়ে বিশাল একটি রংধনু পতাকাও ওড়ানো হয়।
আজ তারা সিডনিতে তাদের ভালোবাসার সংসার সাজিয়েছেন। তাদের একটি পোষ্য কুকুরও রয়েছে, যার নাম জোলেইন।
মিচ এখন আর কানে হেডফোন গুঁজে পিয়ানো বাজান না। বরং তাদের প্রতিবেশীরা প্রায়ই তাদের বারান্দায় বসে তাদের পিয়ানোর সুর শোনে।
তাদের ভালোবাসার গল্পটি সমাজের চোখে হয়তো ‘ভিন্ন’। কিন্তু ভালোবাসার গভীরতা কোনো সীমানা চেনে না, মানে না কোনো বাধা।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান