আমার ছেলে, যে কিনা ইংরেজ, কিন্তু বাবা-মা দুজনেই আইরিশ, তার দ্বি-জাতীয় পরিচয় নিয়ে বেড়ে ওঠার গল্পটা বেশ মজাদার। সে ইংল্যান্ডে বড় হয়েছে, তাই বন্ধুদের সঙ্গে মিশে সে নিজেকে ইংরেজ হিসেবেই পরিচয় দেয়।
কিন্তু যখন আয়ারল্যান্ড ফুটবল বা রাগবি খেলে, তখন সে-ই হয় দলের একনিষ্ঠ সমর্থক।
আমি আর আমার স্ত্রী, দুজনেই নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড থেকে এসেছি। ছেলেকে যখন বলি, ‘তুমি বন্ধুদের মতো ইংরেজ, আবার আমাদের মতো আইরিশও’, তখন সে একটু দ্বিধা নিয়ে উত্তর দেয়, ‘আসলে বাবা, তুমি তো নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড থেকে এসেছ, আয়ারল্যান্ড থেকে তো আসোনি।’
ছোট্ট বয়সে জাতীয়তা এবং পরিচয়ের এই জটিলতাগুলো তার কাছে পরিষ্কার করা বেশ কঠিন ছিল। ছয় বছর বয়সের একটি শিশুর মনে সবকিছু পরিষ্কারভাবে জানতে চাওয়ার প্রবণতা থাকে। তাই, তাকে বিভিন্ন বিষয় বুঝিয়ে বলার চেয়ে, মজা করে বিষয়টি উপস্থাপন করাটাই সহজ ছিল।
যেমন, কোনো কাজ করতে ইচ্ছে না করলে, আমি বলতাম, ‘নর্দার্ন আইরিশরা তো এটা পারে না!’ অথবা, কোনো খেলা খেলতে না চাইলে, আমি বলতাম, ‘আমার এই রাজ্যে তো এসব করার নিয়ম নেই!’
মাঝে মাঝে মজা করে ডাউনিং স্ট্রিট ডিক্লারেশন (Downing Street Declaration)-এর কথা উল্লেখ করে এড়িয়ে যেতাম, যা শুনে সে হাসিতে ফেটে পড়ত।
আমার স্ত্রী, যিনি রিপাবলিক অফ আয়ারল্যান্ড থেকে এসেছেন, তিনি হয়তো এসবের কিছুই বুঝতেন না। কিন্তু আমার ছেলে ধীরে ধীরে বুঝতে শুরু করেছে যে, মানুষ যেমন, তেমনভাবে তাদের গ্রহণ করার মধ্যে একটা আনন্দ আছে।
এখন সে হয়তো ধীরে ধীরে আমাকেও তার মায়ের মতোই আইরিশ ভাবতে শুরু করেছে।
আসলে, পরিচয় একটি বহুমাত্রিক বিষয়। প্রতিটি মানুষের নিজস্ব সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং অভিজ্ঞতার মিশ্রণে তাদের পরিচয় গঠিত হয়। একজন মানুষ একইসঙ্গে একাধিক পরিচয়ের ধারক হতে পারে, যা তার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
শিশুদের ক্ষেত্রে, তাদের এই বহুবিধ পরিচয় বুঝতে এবং গ্রহণ করতে সাহায্য করাটা জরুরি।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান