নতুন দিগন্তের উন্মোচন: ওসাকা এক্সপো ২০২৫-এর ঝলমলে সূচনা। জাপানে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ওসাকা এক্সপো ২০২৫।
বিশ্বজুড়ে যখন অস্থিরতা ও সংঘাত, সেই পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা শুরু হলো এই আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর। রবিবার (মে), ওসাকায় এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এর শুভ সূচনা হয়, যেখানে ১০,০০০ এর বেশি মানুষ বেটোফেনের নবম সিম্ফনি পরিবেশনার মাধ্যমে এই আয়োজনে যোগ দেন।
এই আয়োজন শুধু একটি প্রদর্শনী নয়, বরং এটি একটি নতুন দিগন্তের উন্মোচন, যেখানে ১৫০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলের প্রতিনিধিরা তাদের উদ্ভাবনী চিন্তা ও প্রযুক্তি নিয়ে একত্রিত হয়েছেন।
স্বপ্নদ্বীপের বুকে ভবিষ্যতের প্রতিচ্ছবি। ওসাকার ইয়ুমেশিমা, যার অর্থ ‘স্বপ্নের দ্বীপ’, সেই স্থানে গড়ে উঠেছে এই এক্সপো।
এক সময়ের পরিত্যক্ত শিল্প বর্জ্য ফেলার স্থানটিতে তৈরি করা হয়েছে ৮০টির বেশি অত্যাধুনিক প্যাভিলিয়ন, যেখানে দেশ-বিদেশের প্রতিনিধিরা তাদের ভবিষ্যৎ ভাবনা তুলে ধরছেন। এই প্রদর্শনীটির মূল বিষয় হলো – ‘আমাদের জীবনের জন্য একটি ভবিষ্যৎ সমাজ তৈরি করা’।
এর আগে, ১৯৭০ সালে ওসাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল একটি সফল এক্সপো, যেখানে প্রায় ৬ কোটি ৪০ লক্ষ দর্শনার্থীর সমাগম হয়েছিল। সেই সাফল্যের ধারাবাহিকতায়, এবারও আয়োজকরা আশা করছেন প্রায় ২ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষের আগমন ঘটবে।
বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এক্সপোর গুরুত্ব। বর্তমান বিশ্বে যখন বিভিন্ন দেশে উত্তেজনা বিরাজ করছে, তখন এই এক্সপোর আয়োজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বাণিজ্য যুদ্ধ, ইউক্রেন যুদ্ধ এবং মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতের মতো ঘটনার মধ্যে, জাপান এই প্রদর্শনীকে একটি সুযোগ হিসেবে দেখছে। তারা মনে করে, এই এক্সপো আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করতে এবং বিভেদ দূর করতে সহায়ক হবে।
স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন: গ্র্যান্ড রিং। এক্সপোর অন্যতম আকর্ষণ হলো সুবিশাল ‘গ্র্যান্ড রিং’।
স্থপতি সও ফুজিমোটোর নকশা করা এই কাঠামোগত ডিজাইনটি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে বিশ্বের বৃহত্তম কাঠের স্থাপত্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এর উচ্চতা প্রায় ২০ মিটার এবং পরিধি ২ কিলোমিটার।
এই রিং তৈরি করতে প্রায় ২৩৫ বিলিয়ন ইয়েন (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার বেশি) খরচ হয়েছে, যা জনসাধারণের মধ্যে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তবে, পরিবেশবান্ধব ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে এটিকে আংশিকভাবে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
প্রযুক্তি ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন। এই এক্সপোতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির চমক দেখা যাবে, যেমন – রোবট ও উড়ন্ত গাড়ির প্রদর্শনী।
এছাড়াও, জনপ্রিয় সংস্কৃতি যেমন – হ্যালো কিটি ও গান্ডামের মতো চরিত্রের উপস্থিতি দর্শকদের আকর্ষণ করবে। বিভিন্ন দেশের প্যাভিলিয়নগুলোও তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও উদ্ভাবন নিয়ে হাজির হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রের প্যাভিলিয়নে স্থান পেয়েছে অ্যাপোলো ১২ মিশনের চাঁদের পাথর, যা ১৯৭০ সালের এক্সপোতেও দর্শকদের মন জয় করেছিল। চীন তাদের চন্দ্রাভিযানের মাটি পরীক্ষার নমুনা প্রদর্শন করছে।
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের গল্প। যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে ইউক্রেনের অংশগ্রহণ অনিশ্চিত ছিল, তবে তারা শেষ পর্যন্ত তাদের প্যাভিলিয়ন তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।
তাদের স্টলে যুদ্ধ এবং পুনর্গঠন প্রচেষ্টার ভিডিও প্রদর্শিত হচ্ছে, যা দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়ে যাচ্ছে।
মায়াকু-মায়াকু: এক্সপোর প্রতীক। এক্সপোর প্রতীক হলো ‘মায়াকু-মায়াকু’ নামক একটি রহস্যময় চরিত্র, যার মুখ নীল এবং শরীরে লাল বলের উপস্থিতি রয়েছে।
কানসাই অঞ্চলের একটি ঝর্ণা থেকে জন্ম নেওয়া এই চরিত্রটি বন্ধুত্বপূর্ণ এবং বিভিন্ন রূপে রূপান্তরিত হতে পারে।
ভবিষ্যতের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম। ওসাকা এক্সপো ২০২৫ প্রযুক্তি, সংস্কৃতি, এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ মিলনস্থল।
এটি শুধু একটি প্রদর্শনী নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে বিশ্ব একটি উন্নত সমাজের স্বপ্ন দেখতে একত্রিত হয়েছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস