বিশ্বজুড়ে একদিনের ভ্রমণ: কিভাবে কম খরচে ঘুরে আসা যায়, এক তরুণের অভিজ্ঞতা
বর্তমান যুগে ভ্রমণের ধারণা অনেক বদলে গেছে। লম্বা ছুটি বা বিশাল অংকের টাকা খরচ করার পরিবর্তে, এখন অনেকেই অল্প সময়ে, কম খরচে বিভিন্ন স্থান ঘুরে আসার দিকে ঝুঁকছেন।
সম্প্রতি, কেভিন ড্রোনিয়াক নামের একজন তরুণ, যিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় একজন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হিসাবে পরিচিত, তার একদিনের ভ্রমণের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনায় এসেছেন। প্যারিস থেকে শুরু করে মিশর পর্যন্ত, বিভিন্ন দেশে তিনি কিভাবে মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভ্রমণ করেন, সেই রহস্য ফাঁস করেছেন।
ড্রোনিয়াকের বয়স ২৭ বছর।
তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে ভ্রমণের প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগানো যায় এবং খরচ কমানো যায়।
আমি মানুষের ধারণা ভাঙতে চাই যে কোথাও যেতে হলে এক সপ্তাহের ছুটি দরকার। হাতে সময় না থাকলে, একদিনের জন্যেও ঘুরে আসা যায়। পরিকল্পনা থাকলে, সবই সম্ভব।”
এই ভ্রমণের খরচ বাঁচানোর মূল মন্ত্র সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমি সাধারণত হোটেলে থাকি না। হোটেলে টাকা বাঁচানো গেলে, সেই টাকাটা খাবার এবং অন্যান্য অভিজ্ঞতার জন্য ব্যবহার করা যায়।”
সম্প্রতি, তিনি পুয়ের্তো রিকোতে একদিনের ভ্রমণের একটি ভিডিও তৈরি করেছেন। ভোর ৬টায় ফ্লাইট ধরে, সকাল ১১টায় সান জুয়ানে পৌঁছান তিনি। এরপর সেখানে কিছু সময় কাটিয়ে, মধ্যরাতে নিউ ইয়র্কের উদ্দেশ্যে ফিরে আসেন।
তিনি জানান, “ফ্লাইটের সময় বিবেচনা করে, গন্তব্যের কাছাকাছি একটি বিচ বেছে নিয়েছিলাম। এতে সময় সাশ্রয় হয়।”
একদিন ভ্রমণের ক্ষেত্রে আবহাওয়ার অনিশ্চয়তাকেও মেনে নিতে হয়, এমনটাই মনে করেন ড্রোনিয়াক।
অপ্রত্যাশিত আবহাওয়ার মধ্যেও কিভাবে ভ্রমণ উপভোগ করা যায়, সেটি তিনি দেখিয়েছেন।
পুয়ের্তো রিকোর সমুদ্র সৈকতে বৃষ্টি হলেও, তিনি হতাশ না হয়ে সেখানকার সৌন্দর্য উপভোগ করেন।
ড্রোনিয়াকের মতে, স্বল্প সময়ের ভ্রমণে একটি নির্দিষ্ট আকর্ষণ নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ।
এতে অনেক অপশন থেকে বিভ্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
একটি নির্দিষ্ট স্থান নির্বাচন করলে, সেই স্থানটি ভালোভাবে উপভোগ করা যায়। এতে ভ্রমণের আনন্দ বাড়ে।”
উদাহরণস্বরূপ, পুয়ের্তো রিকোতে তিনি সমুদ্র সৈকতে গিয়েছিলেন এবং সেখানে সময় কাটানোর পর তিনি বেশ সন্তুষ্ট ছিলেন।
ড্রোনিয়াকের এই ভ্রমণ ধারণা প্রমাণ করে যে, ভ্রমণের জন্য অনেক বেশি অর্থের প্রয়োজন হয় না।
তিনি প্রায়ই একাই ভ্রমণে যান এবং নতুন একটি স্থানে অল্প সময়ের জন্য থাকলেও আনন্দ পান।
তার মতে, ভ্রমণের মজাটা আসলে গন্তব্যের চেয়ে অভিজ্ঞতার মধ্যে নিহিত থাকে।
যদিও তার ভ্রমণের ধরন বেশ আকর্ষণীয়, তবে তিনি কিভাবে এত কম খরচে ভ্রমণ করেন, সেই বিষয়েও আলোকপাত করেছেন।
একবার তিনি মাত্র $50 (প্রায় ৫,৫০০ টাকা) -এর বিনিময়ে সিনসিনাটিতে একটি রাউন্ড-ট্রিপ ফ্লাইট পান।
কোনো নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়াই তিনি সেখানে যান এবং শহরটি ঘুরে দেখেন।
ড্রোনিয়াকের মতে, “আমি সাধারণত এমন একটি জায়গায় যাই, যেখানে আগে যাওয়া হয়নি।
সস্তায় ফ্লাইট পেলে, আমার জন্য তা খুবই সুবিধাজনক হয়।”
ড্রোনিয়াকের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ভ্রমণ ছিল মিশরে, যেখানে তিনি একদিনের জন্য গিয়েছিলেন।
এই ভ্রমণে তার ফ্লাইটের খরচ হয়েছিল $650 (প্রায় ৭১,৫০০ টাকা)।
তিনি কায়রোতে পৌঁছে সেখানকার পিরামিডগুলো ঘুরে দেখেন এবং পরের দিন সকালে নিউ ইয়র্কে ফিরে আসেন।
আমি সবসময় পিরামিড দেখতে চেয়েছি, তাই এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইনি।”
দিনের বেলায় ভ্রমণের কারণে অনেকে ক্লান্ত হতে পারেন, তবে ড্রোনিয়াক এর মজা উপভোগ করেন।
তিনি বলেন, “আমার কাছে, বিমানের ভ্রমণটাও একটি আনন্দের অংশ।
বিমানে বসে থাকতে ভালো লাগে।”
আশ্চর্যজনকভাবে, এই ভ্রমণপিপাসু তরুণ তার ৯৫ বছর বয়সী ঠাকুরমার সোশ্যাল মিডিয়াও পরিচালনা করেন।
আর তার এই স্বল্প-দিনের ভ্রমণের ধারণাটি এসেছে ঠাকুরমার কাছ থেকেই।
আমি আমার ঠাকুরমার দেখাশোনা করি। তিনি চান না আমি বেশি দিনের জন্য দূরে থাকি। তাই, বিশ্ব ভ্রমণের পাশাপাশি, আমি তার কাছাকাছিও থাকতে পারি।”
তথ্য সূত্র: পিপল