আলু: স্বাস্থ্যকর নাকি ক্ষতিকর? পুষ্টিবিদদের পরামর্শ
আলু আমাদের খাদ্য তালিকায় একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ভাতের মতোই, আলুও বিভিন্ন ধরণের বাঙালি রান্নায় বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়। তবে, আলু সম্পর্কে অনেকের মনেই কিছু দ্বিধা রয়েছে – এটি কি স্বাস্থ্যকর, নাকি এটি আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর?
বিশেষ করে, ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য আলুর ব্যবহার নিয়ে অনেক প্রশ্ন ওঠে।
এই বিষয়ে বিস্তারিতভাবে জানাতে গিয়ে, খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ ড. ক্রিস্টিন বোশ (লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগের) বলেন, আলুর স্বাস্থ্যগুণ নির্ভর করে এটি কিভাবে প্রস্তুত করা হচ্ছে তার উপর।
আলু শর্করা জাতীয় খাবার, যা শরীরে শক্তি যোগায়। আলুতে ফাইবার বা আঁশ থাকে, যা হজমক্ষমতাকে উন্নত করে এবং পেট ভরার অনুভূতি দেয়।
এছাড়াও, আলুতে রয়েছে পলিফেনল নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের জন্য উপকারী। তবে, সব আলু কিন্তু একরকম নয়।
উদাহরণস্বরূপ, যে আলুগুলো সেদ্ধ করলে নরম হয়ে যায় (যেমন, সাদা আলু) সেগুলো রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়াতে পারে। অন্যদিকে, মোম জাতীয় আলু (যেমন, ছোট আকারের আলু) তুলনামূলকভাবে কম প্রভাব ফেলে।
ডা. বোশ আরও উল্লেখ করেন, আলুর খোসা ফেলে দিলে এর পুষ্টিগুণ কমে যায়।
একটি মাঝারি আকারের (১৫০ গ্রাম) আলু, খোসা সহ খেলে প্রায় ২ গ্রাম ফাইবার পাওয়া যায়, যেখানে খোসা ছাড়ানো হলে এই পরিমাণ ১ গ্রামে নেমে আসে। আলুর খোসায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান বেশি থাকে।
আলু রান্নার পদ্ধতিও এর স্বাস্থ্যগুণকে প্রভাবিত করে। সাধারণভাবে, যে খাবার সহজে ভেঙে যায়, তা রক্তে শর্করার পরিমাণ দ্রুত বাড়ায়।
উদাহরণস্বরূপ, ভর্তা বা ম্যাশ করা আলু whole potatoর চেয়ে দ্রুত রক্তে মিশে যায়।
আলুর স্বাস্থ্যকর দিক বজায় রাখতে, রান্নার একটি বিশেষ উপায় বাতলানো হয়েছে।
আলু সেদ্ধ করে ঠাণ্ডা করে খেলে এর ‘গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স’ (Glycemic Index) বা জিআই (GI) ৩০-৪০% পর্যন্ত কমে যায়। জিআই হলো এমন একটি মাপকাঠি যা খাবারের কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা কত দ্রুত বাড়ে, তা নির্দেশ করে।
গবেষণায় দেখা গেছে, শুধু আলু খেলে সরাসরি ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে না।
তবে, আলু যদি অতিরিক্ত তেল, মাখন বা ক্রিম দিয়ে রান্না করা হয়, তবে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই, পরিমিত পরিমাণে আলু গ্রহণ করা ভালো।
ডা. বোশ আরও যোগ করেন, আলু রান্নার সময় অন্যান্য সবজির ব্যবহার এটিকে আরও স্বাস্থ্যকর করে তুলতে পারে। আলুর সঙ্গে অন্যান্য সবজি মিশিয়ে রান্না করলে খাদ্যের গুণাগুণ বাড়ে এবং শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ লবণের চাহিদা পূরণ হয়।
সুতরাং, আলু আমাদের খাদ্য তালিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে পারে, যদি তা সঠিক উপায়ে প্রস্তুত ও পরিমিত পরিমাণে খাওয়া হয়।
সতর্কতা: এই নিবন্ধটি তথ্য প্রদানের উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে এবং এটি কোনো চিকিৎসা পরামর্শ নয়। স্বাস্থ্য বিষয়ক যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে, একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
তথ্য সূত্র: The Guardian