আলো ঝলমলে জোনাকির দল, রাতের আকাশে যেন এক টুকরো তারা! সবুজ আলোয় ঝলমল করা এই পোকাগুলো একসময় গ্রাম বাংলার অতি পরিচিত দৃশ্য ছিল। বর্ষাকালে অথবা তার আগে-পরে, ধানক্ষেতের পাশে কিংবা ঝোপঝাড়ে এদের আলো দেখা যেত।
কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায়, প্রকৃতির উপর মানুষের আগ্রাসনে আজ সেই দৃশ্যগুলো ক্রমশই বিরল হয়ে যাচ্ছে। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও কি জোনাকিরা হারিয়ে যাচ্ছে? সম্প্রতি এক গবেষণা বলছে, এই আশংকা অমূলক নয়।
গবেষণা বলছে, সারা বিশ্বে প্রায় ২,৬০০ প্রজাতির জোনাকি পোকা রয়েছে। এদের মধ্যে মাত্র ১৫0 প্রজাতির অবস্থা বিজ্ঞানীরা পর্যালোচনা করেছেন।
উদ্বেগের বিষয় হলো, এই প্রজাতিগুলোর মধ্যে ২০ শতাংশই বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। এর কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা মূলত চারটি বিষয়কে চিহ্নিত করেছেন: পরিবেশ দূষণ, আবাসস্থলের অভাব, কীটনাশকের ব্যবহার এবং অপরিকল্পিত পর্যটন।
আলোর দূষণ জোনাকিদের জীবনযাত্রায় মারাত্মক প্রভাব ফেলে। রাতের আকাশে যখন অসংখ্য বাতি জ্বলে, তখন জোনাকিরা তাদের সঙ্গীকে খুঁজে পেতে সমস্যায় পড়ে।
কীটনাশক ব্যবহারের কারণে জোনাকির খাদ্য হিসেবে পরিচিত ছোট পোকামাকড়গুলো মারা যায়, ফলে তাদের খাদ্য সংকট দেখা দেয়। এছাড়া, নগরায়ন ও বনভূমি ধ্বংসের ফলে জোনাকিদের আবাসস্থল সংকুচিত হচ্ছে।
অনেক সময় পর্যটনের নামেও এদের ক্ষতি হয়, যা তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশেও জোনাকিদের ওপর একই ধরনের বিপদগুলো আসছে। শহরে আলো ঝলমলে রাতে এদের দেখা পাওয়া কঠিন। গ্রামগুলোতেও কীটনাশকের ব্যবহার বাড়ছে, যার ফলে জোনাকির সংখ্যা কমছে।
এছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক সময় এদের আবাসস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তবে আশার আলো এখনো নিভে যায়নি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, জোনাকিদের বাঁচাতে হলে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ও সামাজিক উভয় পর্যায়ে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি।
যেমন, রাতে অপ্রয়োজনীয় আলো ব্যবহার করা বন্ধ করা, কীটনাশকের ব্যবহার কমানো, এবং জোনাকিদের বসবাসের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা যেতে পারে। বাড়ির আশেপাশে ঝোপঝাড় তৈরি করে বা গাছ লাগিয়েও এদের আবাসস্থল নির্মাণ করা যায়।
স্থানীয় পরিবেশ বিষয়ক সংগঠনগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়েও এই বিষয়ে কাজ করা যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এখনই পদক্ষেপ না নিলে হয়তো ভবিষ্যতে জোনাকি নামক এই সুন্দর প্রাণীগুলোকে শুধু বইয়ের পাতায় অথবা পুরোনো দিনের স্মৃতি হিসেবেই দেখতে হবে। তাই, আসুন, আমরা সবাই মিলে জোনাকিদের বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করি।
তথ্যসূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক