ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায়ই শুল্কের (tariffs) মাধ্যমে বিশাল পরিমাণ রাজস্ব আদায়ের কথা বলে থাকেন। তিনি দাবি করেন, এই শুল্ক প্রতিদিন প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকার বেশি) আয় করছে যুক্তরাষ্ট্র।
কিন্তু সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ট্রাম্পের এই দাবি বাস্তবতার থেকে অনেক দূরে।
**শুল্ক: রাজস্ব আদায়ের হাতিয়ার?**
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাণিজ্য নিয়ে প্রায়ই বিভিন্ন মন্তব্য করেন। তিনি শুল্ককে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে দেখেন এবং বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে এটি ব্যবহারের পক্ষে কথা বলেন।
আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক বসিয়ে তিনি রাজস্ব আদায়ের কথা বলেন।
এপ্রিল মাসের শুরুতে ট্রাম্প বেশ কয়েকটি দেশের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। যদিও পরে শেয়ার বাজারের অস্থিরতার কারণে কিছু শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়।
**আসলে কত আয় হয়?**
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ট্রাম্পের এই দাবি সঠিক নয়। শুল্ক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত আয় ট্রাম্পের দাবির তুলনায় অনেক কম।
উদাহরণস্বরূপ, ফেব্রুয়ারি মাসে শুল্ক বাবদ প্রায় ৭.২৪৭ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ৭৭ হাজার কোটি টাকার বেশি) আদায় হয়েছিল, যা দৈনিক হিসাবে প্রায় ২৫৮.৮২ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকার বেশি)। মার্চ মাসে এই অঙ্কটা ছিল দৈনিক প্রায় ২৬৩.৪৮ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকার বেশি)।
যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টমস ও সীমান্ত সুরক্ষা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ট্রাম্পের নেওয়া বিভিন্ন শুল্ক-সংক্রান্ত পদক্ষেপের ফলে প্রতিদিন অতিরিক্ত ২০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি রাজস্ব আদায় হচ্ছে।
এছাড়া, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে (অক্টোবর মাস থেকে) এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৬.২ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ৫ লক্ষ ৯৪ হাজার কোটি টাকার বেশি) শুল্ক আদায় হয়েছে, যা দৈনিক হিসাবে প্রায় ২৮৩.৯১ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি)।
তবে এপ্রিল মাসের হিসাব ধরলে দেখা যায়, এখন পর্যন্ত শুল্ক এবং কিছু আবগারি শুল্ক (excise tax) থেকে দৈনিক প্রায় ১৮০.৯৪ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকার বেশি) আয় হয়েছে।
**অর্থনীতিবিদদের মতামত**
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ট্রাম্পের এই হিসাব সঠিক নয়। কারণ, তিনি হয়তো আমদানি করা পণ্যের আগের হিসাব ধরে এই অঙ্কটা তৈরি করেছেন।
শুল্ক বাড়লে যে বাজারের চাহিদা এবং সরবরাহের পরিবর্তন হয়, সেই বিষয়টি তিনি হিসাবে ধরেননি।
নটরডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক রবার্ট জনসন বলেন, “দৈনিক ২ বিলিয়ন ডলার আয়ের যে হিসাব ট্রাম্প দিয়েছেন, সেটি সম্ভবত সঠিক নয়।”
ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফেলিক্স টিন্টেলনট মনে করেন, অতীতে যে হারে বাণিজ্য হয়েছে, সেই হিসাবের ওপর ভিত্তি করে শুল্কের বর্তমান আয় হিসাব করা যায় না।
কারণ শুল্ক বাড়লে ব্যবসায়ীরা পণ্য আনা বন্ধ করে দিতে পারেন অথবা ভোক্তারা বেশি দামের কারণে জিনিস কিনতে নাও চাইতে পারেন।
স latterlyর্যাকুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক রায়ান মনাকও একই মত প্রকাশ করেছেন। তার মতে, “পণ্যের কেনাকাটায় কোনো পরিবর্তন হবে না” – এমনটা ধরে নেওয়া ভুল।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, শুল্কের বোঝা আসলে বিদেশি সরকার নয়, বরং বহন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা।
কারণ শুল্কের টাকাটা যায় যুক্তরাষ্ট্রের কোষাগারে। এর ফলে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়াতে বাধ্য হন, যা শেষ পর্যন্ত ক্রেতাদের ওপর গিয়ে পড়ে।
অন্যদিকে, শুল্কের কারণে বিদেশি কোম্পানিগুলো তাদের পণ্যের দাম কমাতে বা বাজারে টিকে থাকতে মুনাফা কমাতেও বাধ্য হতে পারে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস