যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন কর্তৃপক্ষের হাতে ভুল করে আটক হওয়ার পর, ১৯ বছর বয়সী এক ভেনেজুয়েলীয় তরুণকে এল সালভাদরে ফেরত পাঠানো হয়েছে। জানা গেছে, অভিবাসন কর্মকর্তারা তাকে গ্রেপ্তারের সময় বুঝতে পেরেছিলেন যে, তারা যাকে খুঁজছেন, এই তরুণ সেই ব্যক্তি নন।
নিউইয়র্ক সিটিতে বসবাসকারী মারউইল গুতেরেসকে গত ফেব্রুয়ারিতে আটক করা হয় এবং পরে তাকে এল সালভাদরের কুখ্যাত সেকোট কারাগারে পাঠানো হয়।
মারউইলের পরিবারের সদস্যরা জানান, তারা যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় চেয়েছেন। তাদের দাবি, মারউইলের কোনো অপরাধমূলক রেকর্ড নেই এবং তিনি কোনো গ্যাংয়ের সঙ্গেও জড়িত নন।
ঘটনার পর থেকে তারা তাদের ছেলের বিষয়ে কোনো তথ্য জানতে পারছেন না।
অভিযোগ উঠেছে, গত ২৪শে ফেব্রুয়ারি, ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) মারউইলসহ আরও ২৩৭ জন ভেনেজুয়েলীয়কে আটক করে। মারউইলের বাবা উইলমার গুতেরেস জানান, তার ছেলেকে যেন অপহরণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “আমি ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে তাকে খুঁজেছি। এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় গিয়েছি, কতজনের সঙ্গে কথা বলেছি, কিন্তু কেউ কোনো তথ্য দিতে পারেনি। এমনকি তার মামলার বিষয়ে কোনো কাগজপত্রও দেখাতে পারেনি।”
উইলমার আরও জানান, তিনি আইস কর্মকর্তাদের বলতে শুনেছেন যে, তারা আসলে অন্য কাউকে খুঁজছিলেন। তিনি বলেন, “আমার ছেলের ভবনের সামনেই কর্মকর্তারা তাকে ও আরও দুই তরুণকে ধরেছিল।
একজন অফিসার বলেছিলেন, ‘না, এই সেই ব্যক্তি নয়।’ কিন্তু অন্যজন বলেন, ‘যাকে পেয়েছিস, তাকেই নিয়ে চল।’”
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মারউইলের বিরুদ্ধে ভেনেজুয়েলা বা যুক্তরাষ্ট্রে কোনো অপরাধের অভিযোগ নেই। এমনকি তার শরীরে কোনো ট্যাটুও নেই, যা সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ‘ট্রেন দে আরওয়া’ গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত প্রমাণ করতে ব্যবহার করে থাকে।
এই গ্যাং ভেনেজুয়েলার একটি আন্তজার্তিক অপরাধ চক্র।
এইসব সত্ত্বেও, মারউইলকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং পরে এল সালভাদরে ফেরত পাঠানো হয়, যে দেশের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই।
উইলমার গুতেরেস একটি সংবাদ প্রতিবেদনে জানতে পারেন যে, তার ছেলেকে ১৭৯৮ সালের ‘এলিয়েন এনিমিজ অ্যাক্ট’-এর অধীনে এল সালভাদরে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু ভিডিও দেখেন, যেখানে দেখা যায়, সেখানকার বন্দিদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হচ্ছে।
কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাদের মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া হচ্ছে এবং কারাগারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
উইলমার আরও বলেন, “যদি তাকে ভেনেজুয়েলায় ফেরত পাঠানো হতো, তাহলে হয়তো বুঝতাম। কিন্তু যে দেশে সে আগে কখনো যায়নি, সেখানে কেন?”
এই ঘটনার আগে, ট্রাম্প প্রশাসন একইভাবে কিলার অ্যাব্রেগো গার্সিয়া নামের এক ব্যক্তিকে ভুল করে একই সেকোট কারাগারে পাঠিয়েছিল। এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট এক বৈঠকে জানান, তার সরকার অ্যাব্রেগো গার্সিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত পাঠাতে রাজি নয়।
হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকের আগে, ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্র থেকে, এমনকি সেখানে বৈধভাবে বসবাস করা এবং কোনো অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত নয় এমন অনেককে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিল।
ট্রাম্প প্রকাশ্যে এমন কথাও বলেছিলেন যে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের, যারা কোনো সহিংস অপরাধে জড়িত, তাদেরও এল সালভাদরের ওই কারাগারে পাঠাতে চান।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান