আফ্রিকার ইলেক্ট্রিক গাড়ির (ইভি) বাজারে পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে, তবে এই পরিবর্তনে গ্রামীণ নারীদের অংশগ্রহণ এখনো সেভাবে নিশ্চিত হয়নি।
উন্নত বিশ্বে যখন পরিবেশ-বান্ধব গাড়ির ব্যবহার বাড়ছে, সেখানে আফ্রিকার অনেক নারী এখনো এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
মূলত, বিনিয়োগকারীরা শহর-কেন্দ্রিক ই-মোটরসাইকেল স্টার্ট-আপগুলির দিকে ঝুঁকছেন, যেখানে গ্রাহকদের অধিকাংশই পুরুষ।
তবে, জিম্বাবুয়ের একটি স্টার্ট-আপ মনে করে, তাদের কাছে এই সমস্যার সমাধান আছে: তারা নারীদের জন্য ইলেক্ট্রিক থ্রি-হুইলার (তিন চাকার গাড়ি) সরবরাহ করছে।
“পুরুষরাই মূলত দ্বি-চাকার (মোটরসাইকেল) ব্যবসার সুবিধা পাচ্ছে,” এমনটাই বলছিলেন শান্থা ব্লুমেন।
তিনি ‘মোবিলিটি ফর আফ্রিকা’ নামক জিম্বাবুয়ের একটি স্টার্ট-আপের প্রতিষ্ঠাতা।
এই কোম্পানির গ্রাহকদের মধ্যে ৭৭ শতাংশ নারী।
ব্লুমেন একাই গ্রামীণ অঞ্চলে থ্রি-হুইলার সরবরাহ করেন, যা অসমতল রাস্তায় সহজে চলতে পারে এবং নারীদের জন্য সিটিং ব্যবস্থা খুবই উপযোগী।
তিনি আরও বলেন, “থ্রি-হুইলার মানে নারীদেরও এই পরিবর্তনের অংশীদার করা।
ব্লুমেনের মতে, ২০৩০ সাল নাগাদ আফ্রিকার ইভি বাজার প্রায় ২৮.৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে।
এক্ষেত্রে গ্রামীণ নারীদের জন্য এই থ্রি-হুইলার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
তিনি চান, আফ্রিকার দেশগুলো যেন এশিয়া-প্যাসিফিকের মতো থ্রি-হুইলারের ব্যবহার জনপ্রিয় করে তোলে।
ব্লুমেনের ভাষায়, “আমি সর্বত্র থাকতে চাই, আমি থ্রি-হুইলারের রানি হতে চাই।
এই থ্রি-হুইলারগুলো গ্রামীণ নারীদের জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে।
যেমন, জিম্বাবুয়ের হাউনা গ্রামের ৩৩ বছর বয়সী বাসিন্দা বিউটি সিমঙ্গো গত বছর মে মাস থেকে ‘মোবিলিটি ফর আফ্রিকা’ থেকে একটি ইলেক্ট্রিক থ্রি-হুইলার ভাড়া বা কিনেছেন।
সিমঙ্গো জানান, আগে তাকে প্রতিদিন জল আনতে এবং বাজার থেকে ফসল পৌঁছে দিতে অনেক সময় ব্যয় করতে হতো।
কিন্তু থ্রি-হুইলারের মাধ্যমে মালামাল পরিবহন এবং ট্যাক্সি চালানোর ফলে তার সাপ্তাহিক আয় প্রায় $৩০ থেকে বেড়ে $১৫০ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
যদিও তাকে এখন ভাড়া এবং নিয়মিত ব্যাটারি বদলের জন্য প্রতি সপ্তাহে $৬৫ দিতে হয়।
১২ মাসের মধ্যে তিনি গাড়ির দাম ($২,৩৪০) পরিশোধ করতে পারবেন।
সিমঙ্গো তার উপার্জিত অর্থ দিয়ে ছেলে-মেয়েদের স্কুলের বেতন পরিশোধ করেন এবং কৃষি প্রকল্পে বিনিয়োগ করেন।
তিনি বলেন, “এটি নারীদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে।
তবে, ‘মোবিলিটি ফর আফ্রিকা’ বিনিয়োগের অভাবে কিছু সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
ব্লুমেন ২০১৯ সাল থেকে মোট ৬ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছেন, যার অর্ধেক অনুদান থেকে এসেছে।
এর মধ্যে টয়োটা মোবিলিটি ফাউন্ডেশন থেকে $৩৮০,০০০ ডলারও ছিল।
অন্যদিকে, শহরে ই-মোটরসাইকেল বিক্রি করা কোম্পানিগুলো অনেক বেশি সফল হয়েছে।
যেমন, রুয়ান্ডার ‘অ্যাম্পারস্যান্ড’ এক বছরে ২১ মিলিয়ন ডলারের বেশি সংগ্রহ করেছে, যাদের গ্রাহকদের অধিকাংশই পুরুষ।
এছাড়াও, ‘স্পিরো’ নামক একটি বড় কোম্পানির কয়েক মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থায়ন রয়েছে।
আফ্রিকা ই-মোবিলিটি অ্যালায়েন্স থিংক ট্যাঙ্কের গবেষণা পরিচালক টম কোর্ট্রাইটের মতে, বেশিরভাগ ইভি কোম্পানি শহর অঞ্চলে মনোযোগ দেয়, কারণ এখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি।
বর্তমানে, বেশিরভাগ ইলেক্ট্রিক বাইক এবং থ্রি-হুইলারের জন্য নিয়মিত ব্যাটারি বদলের প্রয়োজন হয়, যার জন্য বিশেষ সুবিধার (সেন্টার) প্রয়োজন।
‘মোবিলিটি ফর আফ্রিকা’-র বর্তমানে এই ধরনের ৬টি সেন্টার রয়েছে।
কিন্তু এই সেন্টার তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করে, বিশেষ করে কম জনসংখ্যার অঞ্চলে।
কোর্ট্রাইটের মতে, “শহরগুলো এখন বিনিয়োগের জন্য ভালো জায়গা।
বর্তমানে, গ্রামীণ আফ্রিকার নারীদের জন্য ইভি বিপ্লব এখনো কিছুটা দূরের পথ।
‘অ্যাম্পারস্যান্ড’-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জশ হোয়েল বলেন, “অবশ্যই, পরিবর্তন আসছে, তবে সহজে লাভ করা যায় এমন ক্ষেত্রগুলো এখনো শহরকেন্দ্রিক।
তথ্য সূত্র: সিএনএন