চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধ: তিক্ততা বাড়ছে, প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতে?
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ ক্রমেই আরও তীব্র রূপ নিচ্ছে। দু’দেশের মধ্যে শুল্ক আরোপের পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপের মধ্যেই চীনের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ‘কান্না থামানোর’ আহ্বান জানানো হয়েছে।
চীন সরকারের মুখপত্র হিসেবে পরিচিত ‘চীন ডেইলি’ এক নিবন্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্য নীতিকে কটাক্ষ করে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র ‘বিশ্বায়নের সুবিধাভোগী’ হয়েও ক্ষতিগ্রস্তের ভান করছে।
অন্যদিকে, হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এখন আলোচনার টেবিলে বসার দায়িত্ব চীনের। বাণিজ্য যুদ্ধের এই ডামাডোলের মধ্যে উভয় দেশের অর্থনীতিতে এর গুরুতর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বাণিজ্য বিরোধের এই পরিস্থিতিতে চীনের পক্ষ থেকে পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে মার্কিন পণ্যের উপর শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর ফলে হংকংয়ের পোস্টাল সার্ভিস (Hong Kong Post) যুক্তরাষ্ট্রগামী পণ্যবাহী পার্সেল গ্রহণ করা বন্ধ করে দিয়েছে।
হংকং পোস্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ‘অযৌক্তিক’ পদক্ষেপের কারণে এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রগামী পণ্য পাঠাতে অতিরিক্ত মাশুল দিতে হতে পারে।
চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি (Chinese Communist Party) ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে নতুন করে আলোচনা করতে রাজি নয়। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বর্তমানে বিভিন্ন এশীয় দেশ সফর করছেন।
ধারণা করা হচ্ছে, এই সফরের মাধ্যমে তিনি অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে চাইছেন।
এদিকে, বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে উভয় দেশের অর্থনীতিতে ইতোমধ্যে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। গত কয়েক মাসে চীনের রপ্তানি খাতে কিছুটা গতি এলেও, ভোক্তা ব্যয় এবং তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বেকারত্বের হার এখনো উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে।
সম্প্রতি, চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশটির অর্থনীতি ৫.৪ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতির কারণে দেশটির বৈদেশিক বাণিজ্যে চাপ সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রও এই বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব মোকাবিলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। দেশটির পক্ষ থেকে ওষুধ ও সেমিকন্ডাক্টর পণ্যের উপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও, গুরুত্বপূর্ণ খনিজ দ্রব্য এবং বিরল মৃত্তিকা ধাতু (rare-earth metals)-এর উপর শুল্ক আরোপের বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে, যা স্মার্টফোনসহ অন্যান্য প্রযুক্তি পণ্যের বাজারে প্রভাব ফেলতে পারে।
এই বাণিজ্য যুদ্ধের সরাসরি প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও পড়তে পারে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেকার বাণিজ্য সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হলে, তা বিশ্ব অর্থনীতির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, যা বাংলাদেশের বাণিজ্য এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেলে, তা দেশের বাজারেও মূল্যস্ফীতি বাড়াতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই বাণিজ্য যুদ্ধ দীর্ঘ সময় ধরে চললে, তা বিশ্ব অর্থনীতির স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। উভয় দেশকেই এখন এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতে হবে।
তথ্য সূত্র: The Guardian