কুকুর ভালোবাসেন এমন মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। পোষ্যদের প্রতি মানুষের এই গভীর ভালোবাসার গল্প প্রায়ই শোনা যায়।
সম্প্রতি এমনই এক ঘটনার কথা জানা গেছে, যেখানে ভালোবাসার টানে প্রিয় কুকুরের স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখতে এক মার্কিন মহিলা প্রায় ৫০ হাজার ডলার খরচ করে ফেলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার বাসিন্দা ওই নারীর নাম জানা যায়নি, তবে তিনি জানিয়েছেন, তাঁর প্রিয় পোষ্য, ‘লুকাস’ নামের একটি বোস্টন টেরিয়ার জাতের কুকুরের সঙ্গে তাঁর আত্মার সম্পর্ক ছিল।
২০১৭ সালে লুকাস যখন তাদের পরিবারে আসে, তখন থেকেই তারা একে অপরের সঙ্গে এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ হয়। লুকাস শুধু একটি কুকুর ছিল না, বরং তিনি ছিলেন ওই নারীর এক নির্ভরযোগ্য বন্ধু ও সহচর।
কিন্তু নিয়তি হয়তো অন্য কিছু লিখে রেখেছিল। লুকাস যখন সাত বছরে পা দেয়, তখন তার শরীরে লিম্ফোমা ধরা পরে।
প্রিয় বন্ধুকে হারানোর আশঙ্কায় দিশেহারা হয়ে পড়েন ওই নারী। প্রথমে তিনি বোন ম্যারো প্রতিস্থাপনের কথা ভেবেছিলেন, কিন্তু সেই প্রক্রিয়ার জন্য উপযুক্ত ডোনার পাওয়া যায়নি।
এরপর তিনি কুকুরটিকে ক্লোন করার সিদ্ধান্ত নেন।
কুকুর ক্লোন করার ধারণাটি অনেকের কাছেই হয়তো নতুন। ক্লোনিং হলো একটি প্রাণীর জিনগত অনুরূপ (genetically identical) আরেকটি প্রাণী তৈরি করার প্রক্রিয়া।
এই পদ্ধতিতে, একটি কোষ থেকে নতুন কোষ তৈরি করা হয়। এরপর সেই কোষ অন্য একটি কুকুরের ডিম্বাণুতে স্থাপন করে ভ্রূণ তৈরি করা হয়।
এই ভ্রূণকে একটি সারোগেট কুকুরের গর্ভে প্রতিস্থাপন করা হয় এবং এর ফলে জন্ম নেয় হুবহু মূল কুকুরের মতো দেখতে একটি নতুন কুকুরছানা।
যুক্তরাষ্ট্রে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে প্রাণী ক্লোনিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে, যদিও অনেক দেশে, যেমন যুক্তরাজ্যে, এটি শুধুমাত্র বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য সীমিত।
লুকাসকে বাঁচানোর জন্য ওই নারী প্রায় ৫০ হাজার ডলার খরচ করেন, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫৪ লক্ষ টাকার সমান।
যদিও তাঁর স্বামী প্রথমে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচের বিরোধিতা করেছিলেন, তবুও তিনি সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের তত্ত্বাবধানে, লুকাসের টিস্যু থেকে কোষ সংগ্রহ করে ক্লোনিং প্রক্রিয়া শুরু হয়।
এর ফলস্বরূপ, দুটি কুকুরছানা জন্ম নেয়। তাদের মধ্যে একজনকে তিনি ‘লুকাস প্রিন্স’ এবং অন্যজনকে ‘লুকাস গ্যাব্রিয়েল’ নামে ডাকতে শুরু করেন।
ওই নারীর দাবি, প্রিন্স দেখতে অবিকল তাঁর আগের লুকাসের মতোই, এমনকি তার আচরণও ছিল একই রকম।
ক্লোনিংয়ের এই ঘটনা অনেকের মনেই হয়তো প্রশ্ন জাগায়—প্রাণীদের ক্লোন করা কতটা যুক্তিযুক্ত?
এই বিষয়ে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মত থাকতে পারে। তবে ওই নারীর জন্য, এটি ছিল তাঁর প্রিয় বন্ধুর স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখার এক উপায়।
তিনি বলেন, এই ঘটনার মাধ্যমে তিনি তাঁর হৃদয়ের ক্ষত সারিয়ে তুলেছেন।
তথ্য সূত্র: The Guardian