প্রায় সাড়ে চারশো বছর আগের একটি পুরনো বই, যা সম্ভবত ইংরেজি ভাষায় লেখা পনির বিষয়ক সবচেয়ে প্রাচীনতম গ্রন্থ, সম্প্রতি খুঁজে বের করেছে যুক্তরাজ্যের লিডস বিশ্ববিদ্যালয়। এই অমূল্য পান্ডুলিপিটি থেকে জানা যায়, খাদ্য এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক ধারণাগুলো সেই সময় কেমন ছিল।
শুধু তাই নয়, আজকের দিনেও বইটির অনেক কথা যেন আমাদের খুব পরিচিত। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালে নিলামে এই বইটি কেনা হয়।
এরপর এর লিখিত বিষয়গুলো অনুবাদ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে, যা এখন সকলের জন্য উন্মুক্ত। বইটিতে পনির সম্পর্কে যেমন নানা তথ্য রয়েছে, তেমনই স্বাস্থ্য বিষয়ক কিছু পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, অতিরিক্ত পনির খেলে যে শারীরিক সমস্যা হতে পারে, সে সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে। বইটির একটি অংশে লেখা আছে, “A surfyte of cheese doth bringe payne”, অর্থাৎ, অতিরিক্ত পনির খেলে তা শরীরের জন্য কষ্টদায়ক হতে পারে।
বইটিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, গেঁটে বাত বা গাউটের (gout) মতো রোগের চিকিৎসার জন্য পনির এবং বেকন ফ্যাট ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হতো। শরীরের গিঁটে গিঁটে ব্যথা হলে, পনির ও বেকনের চর্বি মিশিয়ে তা মালিশ করার কথা বলা হয়েছে।
যদিও লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা এখন কাউকে এই ধরনের “চিকিৎসা” করার পরামর্শ দিচ্ছেন না!
বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্লি মডার্ন হিস্ট্রির অধ্যাপক অ্যালেক্স বামজি জানিয়েছেন, বইটিতে মানুষের স্বাস্থ্য এবং খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে সেই সময়ের ধারণাগুলো ফুটে উঠেছে। তিনি বলেন, “তখন হয়তো ‘ডেইরি ইনটলারেন্স’-এর মতো শব্দ ব্যবহার করা হতো না, তবে এই বইয়ে এমন ধারণা পাওয়া যায় যে, সবার শরীর পনিরের সঙ্গে মানানসই নাও হতে পারে।”
অধ্যাপক বামজি আরও জানান, সেই সময় মানুষের শরীরে ‘হিউমার’-এর (humors) ধারণা প্রচলিত ছিল। তাঁদের মতে, শরীরের ভেতরের উষ্ণতা, আর্দ্রতা ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে কোন খাবার কার জন্য ভালো, তা নির্ধারিত হতো।
বইটির নাম হলো, ‘A Pamflyt Compiled of Cheese, Contayninge the Differences, Nature, Qualities, and Goodness, of the Same’। ধারণা করা হয়, এটি ১৫৮০-এর দশকে লেখা হয়েছিল এবং এর লেখক কে, তা আজও জানা যায়নি।
১১২ পৃষ্ঠার এই বইটি চামড়া দিয়ে বাঁধানো। খাদ্য ইতিহাসবিদ পিটার ব্রিয়ার্স এই বইটিকে একটি অসাধারণ কাজ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তাঁর মতে, “আমার দেখা প্রথম কোনো বই, যেখানে একটি নির্দিষ্ট খাদ্য উপাদান নিয়ে এত বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।” বইটিতে আরও বলা হয়েছে, খাবার শেষে পনির খাওয়া উচিত, কারণ এটি খাবার হজম করতে সাহায্য করে।
এছাড়া, গরুর দুধের পরিবর্তে কুকুরের দুধ পান করলে গর্ভবতী মহিলাদের সন্তান প্রসবের সময় এগিয়ে আসে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। এই বইটির পান্ডুলিপি তৈরি করেছেন রুথ ব্রামলি।
বইটিতে উল্লেখিত কিছু বিষয় নিয়ে যুক্তরাজ্যের একটি রেডিও অনুষ্ঠানে আলোচনা করা হয়েছে এবং একটি রান্নার অনুষ্ঠানে সেই সময়ের একটি রেসিপি তৈরি করার চেষ্টা করা হয়েছে।
এই বইটি থেকে আমরা জানতে পারি, অতীতে মানুষ খাদ্য এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কে কেমন ধারণা পোষণ করত। সেই সময়ের চিকিৎসা পদ্ধতি এবং খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে জানার জন্য এই বইটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
তথ্য সূত্র: The Guardian