মায়ের সঙ্গে মেয়ের মনোমালিন্য: কিভাবে পরিস্থিতি সামাল দেবেন?
বর্তমানে সমাজে পারিবারিক কলহ একটি গুরুতর সমস্যা হিসেবে দেখা যায়। বিশেষ করে মা ও মেয়ের মধ্যেকার সম্পর্ক, যা ভালোবাসার এবং স্নেহের, অনেক সময় তিক্ততায় রূপ নিতে পারে।
সম্প্রতি, এমন একটি ঘটনার কথা জানা গেছে যেখানে এক ব্যক্তি তাঁর মা ও বোনের মধ্যেকার সম্পর্কের অবনতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাঁর বোন, যিনি ৪০ বছর বয়সী, প্রথম সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর থেকেই মায়ের সঙ্গে প্রায়ই ঝগড়া করছেন। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, মারধর করার মতো ঘটনাও ঘটেছে।
ছেলেটির মা, যিনি সবসময় নাতিনাতনীদের দেখাশোনা করেন, তিনিও এই পরিস্থিতিতে মানসিক চাপে রয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি একদিকে যেমন হতাশ, তেমনই অসহায় বোধ করছেন। ছেলেটি তাঁর বোনের এই ধরনের আচরণের কারণ বুঝতে পারছেন না।
তিনি মনে করেন, তাঁর বোনের এই পরিবর্তন উদ্বেগের কারণ। তিনি জানতে চান, কীভাবে তিনি তাঁর মা ও বোনের এই সমস্যার সমাধান করতে পারেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের পরিস্থিতিতে কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করা জরুরি। প্রথমত, বোনের আচরণের কারণ অনুসন্ধান করা প্রয়োজন।
যেহেতু সন্তান জন্ম দেওয়ার পরেই এই ধরনের সমস্যা শুরু হয়েছে, তাই সন্তান জন্ম-পরবর্তী মানসিক স্বাস্থ্য (Perinatal mental health) একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে। অনেক সময়, সন্তান জন্মদানের পর কিছু নারীর মধ্যে মানসিক পরিবর্তন দেখা যায়, যা তাঁদের আচরণে প্রভাব ফেলে।
এই বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। বাংলাদেশে বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে মা ও শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন সেবা পাওয়া যায়।
দ্বিতীয়ত, মায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। যেহেতু মা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, তাই তাঁর জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা দরকার।
এক্ষেত্রে, পরিবারের অন্য সদস্যদের সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে, একজন আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে, অথবা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা মুরুব্বিদের মধ্যস্থতায় বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা যেতে পারে।
তৃতীয়ত, পরিবারের অন্য সদস্যদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ছেলেটিকে তাঁর বোনের সঙ্গে আলোচনার সময় ধৈর্য ধরতে হবে এবং পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করতে হবে।
পরিবারের অন্য সদস্যদের, বিশেষ করে বোনের স্বামীর, ভূমিকাও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। তাঁদের উচিত, পরিস্থিতি ভালোভাবে বোঝা এবং সহযোগিতা করা।
বিশেষজ্ঞরা আরও মনে করেন, এই ধরনের পরিস্থিতিতে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক আলোচনা ও সহানুভূতি খুবই জরুরি। সবার প্রথমে, মায়ের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে হবে।
তাঁকে বোঝাতে হবে যে তিনি একা নন এবং তাঁর পাশে পরিবারের সবাই আছে।
এই ধরনের পারিবারিক কলহ, বিশেষ করে মা ও মেয়ের মধ্যেকার সম্পর্ক, আমাদের সমাজে প্রায়ই দেখা যায়। এই সমস্যাগুলো সমাধানে ধৈর্য, সহমর্মিতা এবং সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
মনে রাখতে হবে, পরিবারের শান্তি ও সুস্থ জীবন আমাদের সবার কাম্য।
তথ্য সূত্র: The Guardian