বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ব্যবসার ব্র্যান্ডের সুনাম ঝুঁকির মুখে ফেলছে এমন কিছু কারণ চিহ্নিত করতে একটি জরিপ চালিয়েছে ‘গ্লোবাল রিস্ক অ্যাডভাইজরি কাউন্সিল’। এই জরিপে উঠে এসেছে, বিতর্কিত ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (Artificial Intelligence/AI) অপব্যবহার ব্র্যান্ডের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে।
খবরটি আন্তর্জাতিক হলেও, এর প্রভাব বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন বিভিন্ন দেশের সরকারি কর্মকর্তা, সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান এবং বিভিন্ন শিল্পখাতের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা।
তাদের মতে, কোনো কোম্পানির জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকির কারণ হলো, এলন মাস্কের মতো বিতর্কিত ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক রাখা।
এছাড়া, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সির ভুল ব্যবহারও ব্র্যান্ডের সুনামকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
এই তালিকায় আরও রয়েছে, পুরনো ‘ডাইভারসিটি, ইক্যুইটি ও ইনক্লুশন’ (DEI) নীতি বাতিল করা, ব্যবসার ক্ষেত্রে অপ্রতিযোগিতামূলক আচরণ এবং মানহানির অভিযোগ।
এই জরিপের প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন জো বাইডেনের শাসনামলে ইউএস স্মল বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের প্রধান ইসাবেল গুজম্যান।
তিনি জানান, জরিপের ফলাফলে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের জন্য একটি সুস্পষ্ট সতর্কবার্তা রয়েছে।
“যদি কোনো কোম্পানি এইসব বিষয়ে তাদের অংশীদার এবং গ্রাহকদের আস্থা হারায়, তবে তা সহজে ফিরে পাওয়া কঠিন।”
জরিপে অংশ নেওয়া একটি বড় অংশের মানুষ (প্রায় ৩০%) মনে করেন, এলন মাস্কের সঙ্গে কোনো ধরনের সংযোগ তৈরি হলে, তা কোম্পানির সুনাম এবং ভাবমূর্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
কারণ হিসেবে তারা মাস্কের বিতর্কিত মন্তব্য এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করেছেন।
উল্লেখ্য, এলন মাস্ক বর্তমানে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বেশ প্রভাবশালী।
অন্যদিকে, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সির ভুল ব্যবহারেও ব্র্যান্ডের সুনাম ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে।
গভীর জাল (deepfake) তৈরি করা, ভুল তথ্য পরিবেশন করা, পক্ষপাতদুষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়া অথবা অনৈতিকভাবে এআই ব্যবহারের মতো বিষয়গুলো এক্ষেত্রে বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মতে, এআই-কে যদি কোম্পানিগুলো ভালোভাবে বুঝতে এবং পরিচালনা করতে না পারে, তবে এর নেতিবাচক প্রভাব সহজে কাটানো সম্ভব হবে না।
বর্তমানে অনেক কোম্পানি তাদের পুরনো ‘ডাইভারসিটি, ইক্যুইটি ও ইনক্লুশন’ (DEI) বিষয়ক কার্যক্রমগুলো বাতিল করার চেষ্টা করছে, যা ব্র্যান্ডের জন্য তৃতীয় বৃহত্তম ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
গ্লোবাল রিস্ক অ্যাডভাইজরি কাউন্সিলের মতে, এই তথ্যগুলো কেবল সংখ্যা নয়, বরং এটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি জটিল যোগাযোগের চ্যালেঞ্জ।
এই চ্যালেঞ্জগুলো ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে বলেও তারা মনে করেন।
এই জরিপের ফল বাংলাদেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার বাড়ছে, এবং এর সঙ্গে বাড়ছে ভুল তথ্য ও গুজব ছড়ানোর প্রবণতা।
তাই, যেকোনো ব্যবসার জন্য ব্র্যান্ডের সুনাম বজায় রাখা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি জরুরি।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান