ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য বিশ্বশক্তির মধ্যে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। এই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এখন রাশিয়াকে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ধারণা করা হচ্ছে, ইরানের উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম সংরক্ষণে সহায়তা করতে পারে মস্কো, অথবা চুক্তি লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকাতেও আসতে পারে তারা।
২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেন। এরপর তিনি তেহরানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন এবং নতুন করে একটি চুক্তিতে উপনীত হওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন, যা ইরানের পরমাণু বোমা তৈরির সম্ভাবনাকে প্রতিহত করবে।
সম্প্রতি, ওমানের মধ্যস্থতায় ইতালির রোমে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে চার ঘণ্টা ধরে এক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
আগামী সপ্তাহে জেনেভায় কারিগরি পর্যায়ের আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে এবং এরপর ওমানে উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
আলোচনায় মূল বিষয়গুলো হলো- ইরানের উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের ভাণ্ডার কোথায় রাখা হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে চুক্তি ভঙ্গ হলে ইরান কী ধরনের নিশ্চয়তা পাবে।
ইরানের পক্ষ থেকে তাদের ইউরেনিয়াম নিজেদের দেশেই রাখতে চাওয়ার কথা বলা হয়েছে, তবে যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছে হয় এগুলো ধ্বংস করা হোক, না হয় রাশিয়া বা অন্য কোনো তৃতীয় কোনো দেশে সরিয়ে নেওয়া হোক।
আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যুক্তরাষ্ট্র যদি চুক্তি থেকে সরে আসে, সেক্ষেত্রে ইরানের কী হবে, সেই নিশ্চয়তা দেওয়া।
তেহরান চাইছে, এমন একটি নিশ্চয়তা আসুক, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তি ভঙ্গের ফলস্বরূপ তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
তারা ইরানের হাতে তাদের ইউরেনিয়ামের ভাণ্ডার ফিরিয়ে দিতে পারে, যা নিশ্চিত করবে যে, চুক্তি লঙ্ঘনের জন্য ইরানকে দায়ী করা হচ্ছে না।
এই ধরনের ব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সম্পর্কের ক্ষেত্রে রাশিয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তৈরি করতে পারে এবং এর ফলে জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলো, যারা ২০১৫ সালের চুক্তির নিশ্চয়তা দিয়েছিল, তারা হয়তো কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়বে।
উভয় দেশই জাতিসংঘের ভবিষ্যৎ ভূমিকা সীমিত রাখতে চাইছে।
আলোচনার জন্য রোমকে গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। কারণ, আলোচনা সফল না হলে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, যিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখেন, তিনি পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেন।
ইরানের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভেন্সের সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তাব দেওয়া হলেও, তা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর এখন তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে দ্রুত চুক্তি করার চাপ রয়েছে – ইরান, হামাস-ইসরায়েল এবং রাশিয়া-ইউক্রেন।
ইরানের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছে, “ইরান একটি যুক্তিবাদী পক্ষ এবং তাদের সঙ্গে চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
আলোচনার আগে তেহরানে সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সফর ইরানের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছে।
এই সফর ছিল ইরানের প্রতি সংহতি প্রদর্শনের একটি বার্তা যে, যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের সম্ভাব্য কোনো আক্রমণের বিরুদ্ধে তারা ঐক্যবদ্ধ।
ওমানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আলোচনার লক্ষ্য হলো একটি “ন্যায্য, টেকসই এবং বাধ্যতামূলক চুক্তি” অর্জন করা, যা নিশ্চিত করবে যে ইরান পরমাণু অস্ত্র থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত থাকবে এবং একইসঙ্গে শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরমাণু শক্তি ব্যবহারের অধিকার বজায় রাখবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান