শিশুদের প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা, আমদানি শুল্কের কোপে অভিভাবকরা। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের দাম ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে।
সম্প্রতি মার্কিন সরকার চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপ করেছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে শিশুদের সামগ্রীর ওপর। জানা গেছে, চীন থেকে আসা কিছু পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসানো হয়েছে, যা অভিভাবকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের প্রায় ৯০ শতাংশই তৈরি হয় এশিয়াতে, যার একটি বড় অংশ আসে চীন থেকে। এর মধ্যে রয়েছে শিশুদের পোশাক, খেলনা, খাবার তৈরির সরঞ্জাম, ডায়াপার, বেবি সিট, স্ট্রলার—এমন আরও অনেক কিছু।
শুল্কের কারণে এসব পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে, যা পরবর্তীতে ভোক্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের একজন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক স্যাম রুটলেজ জানান, জুলাই মাসে তার সন্তানের জন্ম হওয়ার কথা রয়েছে। তাই তিনি এরই মধ্যে বাচ্চার জন্য প্রয়োজনীয় অনেক জিনিস কিনে ফেলেছেন।
তিনি বলেন, “শুল্ক আরোপের খবর পাওয়ার পর আমরা দ্রুত জিনিসপত্র কেনা শুরু করি, কারণ দাম আরও বাড়লে হয়তো আমাদের নাগালের বাইরে চলে যেত।”
শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম এমনিতেই অনেক বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে একটি শিশুর লালন-পালনের প্রথম বছরে গড়ে প্রায় ২০,৩৮৪ ডলার খরচ হয়।
এই অবস্থায় শুল্ক বৃদ্ধি অভিভাবকদের জন্য বাড়তি বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
“মঞ্চকিন ইনক” নামক একটি কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টিভেন ডান জানান, তার কোম্পানির প্রায় ৬০ শতাংশ পণ্য চীনে তৈরি হয়।
শুল্কের কারণে তিনি চীন থেকে নতুন করে পণ্য আমদানি বন্ধ করে দিয়েছেন এবং কর্মী নিয়োগও স্থগিত রেখেছেন।
তিনি আশঙ্কা করছেন, আগামী তিন মাসের মধ্যে তাদের কিছু পণ্যের সরবরাহ ফুরিয়ে যেতে পারে।
ডান আরও জানান, তারা চীন নির্ভরতা কমানোর চেষ্টা করছেন। কিছু উৎপাদন তারা ভিয়েতনাম ও মেক্সিকোতে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
কিন্তু শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় অনেক জটিল পণ্য তৈরি করার মতো প্রযুক্তি ও কারিগরি দক্ষতা এখনো যুক্তরাষ্ট্রের অনেক প্রস্তুতকারকের কাছে নেই।
এই পরিস্থিতিতে অনেক খুচরা ব্যবসায়ীও উদ্বেগে রয়েছেন। ওয়াশিংটনের একটি বেবি শপের মালিক এলিজাবেথ মাহন জানান, তিনি আশঙ্কা করছেন, শুল্কের কারণে প্রয়োজনীয় পণ্যগুলো অনেক পরিবারের জন্য কেনা কঠিন হয়ে পড়বে।
তিনি বলেন, “শিশুদের নিরাপত্তা সামগ্রীর দাম বাড়লে শিশুদের ক্ষতির ঝুঁকি বাড়বে।”
মিশিগানের “দি লিটল সিডলিং” বেবি শপের মালিক মলি গিং জানান, সাধারণত এই সময়ে তিনি বড়দিনের জন্য পণ্যের অর্ডার করেন।
কিন্তু এখন তিনি তার সরবরাহকারীদের কাছ থেকে আসা দাম বাড়ানোর নোটিশগুলো নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
তিনি জানান, তার ১৩ জন কর্মী—যারা সবাই মা এবং তাদের বাচ্চাদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করেন—তাদের ভবিষ্যৎ নিয়েও তিনি চিন্তিত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে অভিভাবকদের সচেতন থাকতে হবে।
শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার ক্ষেত্রে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে।
এছাড়া, বিশ্ব অর্থনীতির এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতি কীভাবে ভোক্তাদের জীবনকে প্রভাবিত করে, এটি তারই একটি উদাহরণ।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস